Your slogan here
Welcome
Here you can
enter your
own text


diaper cake
ফেসবুক লাইভেই মেয়েরা কেমন হট হয় দেখুন আমাদের সমাজের মেয়েরা কি এমনি লাইভ ভিডিও করে ভারতি মেয়েরা এমনি ভাবে ফেসবুকেই লাইভ হট হয় কেনো দেশী মেয়েরা ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে এমন হট হয় দেশী মেয়েরা ভালোবাসার টানে এমনি লাইভ হট ভিডিও দেয় দেশী মডেলরা কিভাবে পারে এমন হট লাইভ ভিডিও দিলে দিয়েই দিলো তামান্না তার হট লাইভ ভিডিওটা এমন খারাফ ভাবে এই লাইভ হট ভিডিও দিলো মেয়েটা ভালো মেয়েরা এমন হট ভিডিও দেয় না ফেসবুক লাইভেই লাইভ চলাকালে এ কেমন আচরণ করিলো দেশি যুবতি ভালোবাসার টানে এমনি হট লাইভ ভিডিও দিলো ফেসবুকে প্রেম করে লাইভে এসে ভিডিও ছাড়া কি অপরাধ নয় বন্ধুরা ‘চয়নকে পাওয়া যাচ্ছে না, কেউ কি জানো কোথায় গেল ছেলেটা?’ মিলনার প্রশ্নে সকলেই হতবাক। ‘এই তো কালই ও তোমাদের বাড়িতে কত কাজ করল। তারপর কি হল, কোথায় গেল?’ পাড়াপড়শির মুখে এক কথা শুনতে শুনতে মিলনা একেবারে অস্থির। এদের কাজই এই, শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন, অথচ ছেলেটা যে কোথায় গেল তার খোঁজ কারুর কাছেই পাওয়া যায় না। হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে মিলনা গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে, কাঁচামাটির রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটলে ব্যথা করে। সে আর বেশী এগোয় না, বাতের ব্যথাটা বাড়তে পারে। একবার জোরে শুধু চেঁচিয়ে ডাকে, ‘চয়-য়-য়-ন এ-এ-এ চয়-য়-য়-ন। কোথায় গেলি বাপ?’ মিলনার মোটা ফাটা গলার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ ধরে দূর হতে দূরান্তরে। কিন্তু তবু সে পায় না কোন সাড়া। চয়নের এই ব্যবহারে মনে মনে সে একটু ক্ষুণ্ণই হয়েছিল। তাদের বাড়িতে এত বড় একটা অনুষ্ঠান, অথচ শেষবেলাতে কেন সে নেই? এটা মিলনা মানতে পারে না কিছুতেই। তার মনে একদিকে তাই দুঃখ, তেমনি অন্যদিকে আনন্দও বটে। আনন্দ কেন? বাঃ, হবে না? আজ যে তার একমাত্র মেয়ে রূপার বিয়ে। একটু ভুল করলাম, বিয়ে ছিল কাল। আজ সে যাবে শ্বশুরবাড়ি। সোদপুরে ওদের একটা ফ্ল্যাট আছে। আপাতত সেখানেই উঠবে তারা। তাদের স্থায়ী অবশ্য ঠিকানা মুম্বাই। বর ইণ্ডিয়ান অয়েলের ইঞ্জিনিয়ার। প্রচুর মাইনে তার। অর্থাৎ পাত্র যে খুব ভাল হয়েছে সে কথা বললেও খুব কম বলা হয়। এ গ্রামে এমন পাত্র কস্মিনকালেও কারুর জুটেছে নাকি? একে তো এ এক অজ পাড়া গাঁ। তায় আবার রূপার বাবা সামান্য ছুতোরের কাজ করে। মা সাধারণ গৃহবধূ। দুই দাদার একজন প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র পেটায়, থুড়ি পড়ায়। আর আরেকজন বাবার সাথে হাতুড়ি ঠোকে। এদের ঘরের মেয়ে বিয়ে করে যাবে মুম্বাই? এখানে তো ভাল ছেলে মেলাই ভার। তবে রূপার ভাগ্যে সত্যিই হয়ত শিকে ছিঁড়ত না, যদি না মাঝখান থেকে তার এক কাকা এসে পড়ত। তো সেই কাকার অফিসের এক কলিগের সাথে রূপার না জানি কি করে দেখা হয়ে যায়। ঘটনাক্রমে সেই ভদ্রলোকও তাঁর ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। ব্যস, দেখামাত্র রূপার রূপে তিনি গেলেন মজে। একেই বলে প্রজাপতির নির্বন্ধ। তবু পাত্র যতই ভাল হোক আর যতই থাকুক সম্পত্তি, মেয়ের এই চলে যাওয়ার সময়টা সব মায়ের কাছেই বড় দুঃখের। চোখের জল আর তখন বাঁধ মানে না। রূপার অবস্থাও ওর মায়ের মতই। চোখের জলে কাজল, লিপস্টিক সব ধুয়ে সারাটা মুখে মাখামাখি। ধরা ধরা গলায় মিলনা বলে, ‘কাঁদিস না মা, কালই তো যাব। অমন করে কাঁদতে নেই’। বাবা দাঁড়িয়েছিল পিছন ঘুরে। রূপা তাকে ডাকতেই সে এদিকে ফিরে রূপাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। দুজনার মধ্যে কোন কথা হয় না; সবটাই বলে অশ্রু। খানিকবাদে বেরিয়ে আসার সময় রূপা একটু উদ্বিগ্ন হয়ে মাকে জিগ্যেস করে, ‘আছা, চয়ন কোথায় মা? ওকে তো দেখছি না?’ মাও ততোধিক চিন্তিত গলায় বলে, ‘কি জানি, আমিও তো কত খুঁজলাম ওকে। পেলামই না। কাল সারাদিন, সারাত কাজ করে কোথায় যে গেল, কে জানে’। রূপা অবাক হয়ে যায়, তারপর হতাশার শ্বাস ফেলে বাইরের দিকে তাকায়। পাড়ার সমস্ত লোক এসে ভিড় করেছে। ছোট্ট ঘরেতে আর তিলধারণের জায়গাও নেই। বাইরের ঘরে, বারান্দায়, উঠোনে – সর্বত্র লোক একেবারে গিজগিজ করছে। মাঠের কাজ পর্যন্ত বন্ধ রেখে সব ছুটে এসেছে গাড়ি দেখতে, বড়লোক জামাই দেখতে। সুদর্শন যুবক নব্যেন্দু, চেহারাটায় আভিজাত্যের ছাপ। তার হাত ধরে আই টুয়েন্টিতে উঠে বসে রূপা। গাড়িতে বসে রূপা হাত নাড়ায় একবার। তারপর গাড়ির দরজা ‘ধপ’ করে বন্ধ হতেই গাড়ি দিল দে ছুট। কাঁচাপাকা রাস্তা ধরে এগোতে থাকে, বাতাস ছোটে সোঁ সোঁ। দুধারে বিস্তীর্ণ ধানী জমি, গাছপালা, বনবাদাড়, পুকুর, খাল, বিল, ছোট নদী, ঘুঁটে দিতে থাকা মেয়ে, কাস্তে হাতে চাষি, বিড়ি টানা দোকানী – সবাই অবাক পানে তাকিয়ে থাকে গাড়িটার দিকে, আর গাড়ির ভেতর থাকা তাদেরই ঘরের মেয়ে রূপার সৌভাগ্যের দিকে। তবে রাস্তার পাশে ঐ যে একটা জঙ্গল দেখছেন, ওর সামনেই একটা অশ্বত্থ গাছ। তার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাইশ-তেইশ বছরের একটা ছেলে। রোগা পাতলা বেঁটেখাটো চেহারা। তার বড্ড রাগ ধরে এই গাড়িটাকে দেখে। শুধু এই গাড়িটাই নয়, সমস্ত সম্পদ-সম্পত্তি, টাকা-পয়সা – সবকিছুর উপর তার বিবমিষা আসে। আর যখন গাড়িটা ধীরে ধীরে তার দৃষ্টিপথের বাইরে চলে যায়, হঠাৎই ঝাপসা হয়ে আসে তার চোখ দুটো। অশ্রু আর বাঁধ মানে না। যেন দুঃসহ কোন কষ্ট সে সহ্য করে চলেছে। অথচ কেউ নেই তার। কেউ তাকে দেখে না, সবাই দেখে ঐ বড়োলোকি গাড়ি। এর ঠিক একবছর পর ম্যারেজ অ্যানিভার্সারিতে রূপারা ওদের সোদপুরের ফ্ল্যাটে উঠেছিল। বছরের বেশীরভাগ সময়ই যেটা ফাঁকা পড়ে থাকে। সেবার তারা গ্রামে যাওয়ার সময় পায়নি, কারণ নব্যেন্দুর ছুটি ছিল না। তাই রূপার মা-বাবাও ওদের সোদপুরে গেছিল। মেঝেতে টাইলস, বাথরুম-রান্নাঘরে মার্বেল দেখে মিলনা তো হতবাক। তার মনে পড়ে রূপার বিয়ের আগে ওর বাবা ঘরের মেঝে পাকা করেছিল, তাই দেখেই পাড়ার লোকেরা বলত, করেছ কি হে প্যালার বাপ! একেবারে বড়লোক হয়ে গেলে যে!’ সেসব কথা শুনে নিজেদের বেশ বড়লোক মনে করেছিল মিলনা। কিন্তু তার তো ধারণাতেই ছিল না যে কোন বাড়িতে এত বড় বড় ঘর, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার এসবও থাকতে পারে। মিলনা তাই অবাক হয়ে যায়। সে আরও অবাক হয় যখন সে লক্ষ্য করে বাড়িঘরের সাথে সাথে তাদের রূপাও অনেক বদলে গেছে। ওর কাজেকর্মে, চলনে-বলনে একটা বেশ করিৎকর্মা ভাব এসেছে। যেন তাদের সেই রূপা আর নেই। রূপার একটা কথা মিলনার কানে বেশ বাজে, যখন মেয়ে তাকে বলে, ‘কিচেনটা বেশ বড় তাই না?’ ‘কিচেন?’ হায় রে! এই মেয়েই কিনা আট বছর পর্যন্ত রান্নাঘরকে ‘আন্নাঘর’ বলত। তারপরে রান্নাঘর বলতে শিখলেও মাঝেমাঝে ইচ্ছে করেই পুরনো অভ্যাস সে বদলাত না। ছোটবেলাকার ভুল ইচ্ছা করেই করত আর তারপরেই সে খিলখিল করে হেসে উঠত। ‘কি ভাবছ, মা?’ রূপার প্রশ্ন। মিলনা তার দিকে তাকিয়ে স্নেহের হাসি হেসে বলে, ‘কিছু না সোনা, তোর এই ঘর ভাল লেগেছে, এতেই আমার শান্তি’। সেদিনটা কাটল বেশ মজায়। ভিডিও ক্যামেরায় বাড়ির সকলের ছবি তোলা হল। রূপার বাবা কি মিলনার কেউই বুঝতে পারছিল না, ভিডিও কিভাবে হচ্ছে। তারপর এল ই ডি কম্পিউটারে যখন ভিডিওটা দেখানো হল, মিলনা তো বিস্ময়ে হতবাক। মেয়েকে আস্তে করে সে জিগ্যেস করে, ‘আমাদের ছবি টিভিতে দেখাচ্ছে কি করে রে?’ রূপা হাসি চাপতে পারে না। মাকে সে বুঝিয়ে দেয়, ‘মা! এটা টিভি নয়, কম্পিউটার। আমাদের ছবি ভিডিও করা হল তো, এখন কম্পিউটারে দেখাচ্ছে’। মিলনা খানিকক্ষণ বোঝার চেষ্টা করে বলে, ‘অ, কম্পিউটার। ওই একই হল, একরকমই তো দেখতে সব’। মিলনার কথায় সবাই হেসে ওঠে জোরে। শুধু একজন ছাড়া, সে হল নব্যেন্দুর বাবা। কি করেই বা সে হাসে? সে যে ইতিমধ্যেই নাক ডাকতে শুরু করেছে। বড্ড ঘুমকাতুরে কিনা। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর বাড়ির সকলে তখন একটু তন্দ্রামগ্ন, রূপা আর মিলনার সেটাই সময় নিজের মত করে একটু গল্প করার। নিজের বাড়ির কথা, গ্রামের কথা শুনতে শুনতে আবার সে ফিরে যায় সেই সে পুরনো দিনে। যেখানে ছিল তার ছোটবেলা, তার বন্ধুবান্ধব, তার পাড়া-প্রতিবেশী। সে জিগ্যেস করে, ‘আচ্ছা মা, চয়ন আর আসে? ওর সাথে তো দেখাই হল না আর?’ মিলনা ঠোঁট উল্টে বলে, ‘কোথায় আর আসে? তোর বিয়ের পর থেকেই তো একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে গেছে। কিছু বলতে গেলেই বলে, এখন সময় নেই। এমন ভাব করে যেন আমরা পর। -‘তোমরা ওকে বকাঝকা করো নি তো?’ -‘কই না তো? আর আমাদের বকাই যেন শুনছে! দেখতিস তো, কাউকে পাত্তা দিত? কারুর কথা গায়ে মাখত? কিন্তু এখন দেখলে বুঝবি, ও একেবারে বদলে গেছে। বাড়িতে একাএকাই থাকে, কারুর সাথে আর তেমন মেশে না, কথা বলে না’। -ভারী অদ্ভুত তো?’ ‘কে অদ্ভুত?’ পিছন থেকে কে যেন বলে ওঠে। রূপা চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে নব্যেন্দু। তারপর সে আবার বলে, ‘অনুপ্রবেশের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী’। -‘আরে ধুর! এস। ঘুম হল না?’ মিলনা জানতে চায়। ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়িয়ে নব্যেন্দু বুঝিয়ে দেয় দুপুরে ঘুমনো তার স্বভাব নয়। তারপর সে বলে, ‘কার কথা হচ্ছিল?’ রূপা বলে, ‘ঐ আমার একটা বন্ধুর কথা, চয়ন। তোমায় বলেওছিলাম ওর কথা’। নব্যেন্দু ভুরূ কুঁচকে জিগ্যেস করে, ‘কে বলতো? নামটা শোনা শোনা লাগছে?’ রূপা বলতে থাকে চয়নের কথা। ছোটবেলায় মেয়েলি স্বভাবের জন্য যাকে ‘লেডিস চিনি’ বলে ডাকত লোকে। ভারী লাজুক। যখন ওর সাথে রূপার পরিচয় হয় তখন সে তিনে পা দিয়েছে, আর রূপা সাড়ে চার। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে সে ডাকত, ‘লুপাদিদি, এ লুপাদিদি। খেলতে আবি না?’ ‘লুপাদিদি’ বাড়ি থেকে বেরোলে দুজনে দিত দে ছুট। বিস্তীর্ণ মাঠ ধরে, আল বেয়ে দৌড়ত তারা, তারপর খুনসুটি করত, মারামারি করত। আবার পড়ে গিয়ে একজনের কেটেছড়ে গেলে অন্যজন ধুয়ে দিত বোসেদের পুকুরের জলে কিংবা গাঁদা পাতার রস লাগিয়ে দিত কাটা জায়গায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে যেত ছ’টা কি সাড়ে ছ’টা। ওরা শুনতে পেত, চয়নের মায়ের গলা, ‘চনু, অ্যা চনু। শীগগির ঘরে আয়। নয়ত আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন। বলেচি না, পাখিরা বাড়ি ফেরার আগে ঘরে ডুকবি? কথা কানে যায় না বুঝি? ডাঁড়া, তোর হচ্চে’। আর ছিল পুতুল খেলা। সে খেলাতেই কেটে যেত দিনের প্রায় অর্ধেক। পুতুলকে স্নান করানো, খেতে দেওয়া, ঘুম পাড়ানো – কাজ কি আর একটা! ‘ওঃ, এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা যায় না’। বড়দের মত করে চয়নকে শাসন করত রূপা। তারপর পুতুল ঘুমিয়ে পড়লে চয়নকেও নিজের কোলে রেখে সে ঘুম পাড়াত। কোথায় হারালো সেই দিনগুলো, ভাবতে ভাবতে রূপা বিভোর হয়ে যায়। যেন একটা অনির্দেশ্য আকর্ষণ তাকে নিয়ে যেতে চায়, সেই হলুদ দুপুরে, তার সেই ছোটবেলাটায়। এইভাবেই তারা বড় হয়ে গেছিল নিতান্ত সরলভাবে, অত্যন্ত সাধারণভাবে। স্কুলটা ছিল বেশ দূরে, পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগত সাইকেলে। কাছেপিঠে কোন স্কুল ছিল না যে। একের পর এক ক্লাস পেরিয়ে গেল তারা। ওয়ান, টু, থ্রি করতে করতে একসময় চয়নের ক্লাস ইলেভেনে ওঠার সময় হল। মনে পড়ে, সেদিন মাধ্যমিকের রেজাল্ট নিয়ে বাড়িতে আসছে, দূর থেকে চয়নের নজরে আসে বাড়ির সামনে বেশ কিছু জটলা। আর একটু এগিয়ে এসে সে শুনতে পায় তার মায়ের কান্নার আওয়াজ। গলা ফাটিয়ে চীৎকার করে কাঁদছে তার মা। এমন কি হল যে মা কাঁদছে? একরাশ কৌতুহল নিয়ে দৌড়ে যায় চয়ন। ভিড় ঠেলে কিছুটা এগিয়েই দেখে বাবার শায়িত দেহটা, সাদা চাদরে ঢাকা আশিরনখ। পেছন থেকে কে যেন বলে, ‘একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে...। বড় ভাল ছিল গো লোকটা’। বাবা চলে যাওয়ার কিছুদিন পরেই ওদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বাবার দোকানটা বেচে কিছু টাকা পাওয়া গেল। ওর মায়েরও মাথার রোগ হল। এখন এই রোগকে বলে ডিপ্রেশন। ওরা গ্রামের লোক, ঘটনাটাও অনেক আগের, তাই ওরা এইসব রোগ সম্বন্ধে কিছুই জানত না। একদিন কাউকে কিছু না বলে কয়ে ওর মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ব্যস, সেই যে গেল, আর কোনদিনও ফিরল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। কিন্তু সবটাই বৃথা। একটা কষ্ট যেন রূপার বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চায়। সে ক্ষণিকের জন্য থেমে কিছুটা দম নিয়ে নেয়। তারপর সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে, তার চোখদুটো জলে ভরে উঠেছে। পরের দিনই ওদের মুম্বাইয়ে ফেরার পালা। ফ্লাইটে সেভাবেই বুক করা ছিল। মুম্বাইয়ে পৌঁছে রূপার মাথায় একটা প্ল্যান কাজ করল। সে ঠিক করল ওদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারিটা এখানেও আরেকবার হবে। হোক না তা দিন তিন-চার পর। ক্ষতি কি একটা গেট টুগেদারে? বিয়ের প্রথম বছর বলে কথা; ইয়ার বন্ধুদের সাথে একটু ফষ্টিনষ্টি হবে না, তাই কি হয়? প্রস্তাবে রাজী হয়ে নব্যেন্দু বলে, ‘বেশ তো। সানডেতেই হোক তাহলে?’ রূপা ফেটে পড়ে আনন্দে। নব্যেন্দু জিগ্যেস করে, ‘তোমার সেই বন্ধুকে ডাকবে না?’ রূপার ভুরু কুঁচকে যায়, ‘কে বল তো?’ -‘আরে ঐ চয়ন না কি যেন নাম বলেছিলে?’ রূপা হো হো করে হেসে ফেলে। তারপর বলে, ‘আরে ছাড়ো তো। ও আসবে এখানে? ওর মত গেঁয়ো ভূত তো গ্রাম থেকে বেরোতেই ভয় পায়’। চয়নের নাম বলতেই তার আবারও মনে আসে সেই সব দিন। মা চলে যাওয়ার পর থেকেই চয়নের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছিল। সে হঠাৎ ছবি আঁকতে শুরু করল। অনেক ছবি আঁকত সে। ছবির কতকগুলো বইও জোগাড় করেছিল কোত্থেকে। সেই বই দেখে আঁকত, তারপর মন থেকে আঁকা শুরু করল সে। ভারী সুন্দর আঁকতে পারত সে। আর করত বাগান। বাগানে নানান ধরনের ফুলগাছ লাগাত। কি সুন্দর বাহারি ফুল ধরত তাতে। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। গোলাপ, টগর, রজনীগন্ধা, ইনকা, ডালিয়া তো থাকতোই, সঙ্গে থাকত আর কত নাম না জানা হরেকরকম ফুলের গাছ। রূপার ভারি ভাল লাগত বাগানটা। একদিন সে রূপাকে জন্মদিনে একটা ছবি এঁকে উপহার দিয়েছিল। ছবিটায় ছিল - রূপার বিয়ে হচ্ছে, সে তার বরের সাথে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে। ছবিটা দেখে রূপা এমন রেগে গিয়েছিল যে সে সেটা ছিঁড়েই ফেলল সেদিন। কিন্তু আজ তার মনে হয়, ওটা না ছিঁড়লেই ভাল হত। বড় সুন্দর এঁকেছিল সে ছবিটা। পাড়ার লোকেরা বলত, ‘কিসব ফালতু কাজে সময় নষ্ট করছিস। তার চেয়ে বাপের দোকানটা দেখলে তো পারতিস’। লোকের কথায় পাত্তাই দিত না সে। বাবার দোকান বেচার টাকাতেই তার তখন চলে যেত। কিন্তু বসে খেলে জমানো টাকাই বা আর কতদিন চলে? ভাঁড়ারে তো একদিন না একদিন টান পড়বেই। আর পড়লও তাই। তার ফলটা কি হল? আজ চয়ন একটা সামান্য দোকানের কর্মচারী। কথাগুলো বলতে বলতে থামে রূপা। নব্যেন্দু ওর কাঁধে একটা হাত রেখে বলে, ‘পুরনো দিনের কথা মনে পড়লে কষ্ট লাগে রূপা। ছাড় ওসব’। রূপা তার কথা যেন শুনতে পায় না। বড্ড অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে সে। গেট টুগেদার হওয়ার কথা ছিল রবিবার। শনিবার একটা পার্সেল এলো ওদের বাড়ি। রূপা ভাবল, আজ আবার কি এলো পার্সেলে? বোমাটোমা নেই তো আবার? নব্যেন্দু তখন বাড়ি ছিল না। সইসাবুদ করে নিয়ে পোস্টম্যান চলে গেল। একরাশ কৌতুহল নিয়ে রূপা পার্সেলটা খুলতেই দেখে প্যাকেটে মোড়া একটা কাঠের ফ্রেম। প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ফ্রেমে বাঁধা একটা জলছবি। জলছবিতে এক স্বামী তার স্ত্রীর দিকে একটা নীল গোলাপ বাড়িয়ে ধরেছে। স্ত্রীর হাতেও সেই একই ফুল, সে তার স্বামীকে উপহার দিচ্ছে। কিন্তু সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার যে এই ফুলদুটো কিন্তু ছবিতে আঁকা নয়, বাস্তব। উজ্জ্বল নীল রঙের গোলাপ দুটো ছবির সাথে কি সুন্দরভাবে আটকানো রয়েছে। রূপার চোখদুটো জুড়িয়ে যায়। সে নীল গোলাপ যে দেখেনি তা নয়, কিন্তু এ অন্য জাতের গোলাপ। অনেক বড়, আরো অনেক সুন্দর। কি অপূর্ব এর গন্ধ। কোথায় আজকের এই রুম ফ্রেশনার! রূপার মন মেতে ওঠে এই ফুলদুটোর বর্ণে-গন্ধে। কিন্তু কে পাঠালো এত সুন্দর এই ফুলদুটো? পার্সেলটার ভেতরে সে ভাল করে খুঁজে দেখল কিছু আছে কিনা যা দিয়ে সে বুঝতে পারে এটা কার উপহার? কিন্তু পার্সেলে আর কিছুই ছিল। নব্যেন্দু অনেক রাত করে ফিরল সেদিন। এই ছবিটা দেখেই সে মুগ্ধ হয়ে যায়। অবাকপারা হয়ে সে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘অসাম, ফুলদুটো রিয়েল হওয়াতে ছবিটা আরো ভাল লাগছে। কিন্তু কে দিল সেটাই বুঝতে পারলে না?’ রূপা বলে, ‘আমার মনে হয় ঐ পাগলাটাই দিয়েছে’। - ‘কে?’ - ‘কে আবার, চয়ন। ও ছাড়া কেই বা আর আমায় এই গিফট দেবে বল? আমার আর কোনো বন্ধুই তো এত সুন্দর ছবি আঁকতে পারে না’। - ‘বড় ভাল ছেলেটা’। পরেরদিন নব্যেন্দু এই ছবিটাকে ড্রয়িংরুমের শোকেয়ের ওপর রেখে দিল যাতে সকলের নজরে পড়ে। আর পড়লোও তাই। কেউ এর তারিফ না করে পারল না। একজন বলল, ‘দিস ইজ আ ওয়ার্ক অফ আর্ট’। আরেকজন তাকেই সায় দিয়ে বলে, ‘সে আর বলতে? এই ফুলটাও খুব রেয়ার। আমার এক বন্ধুর নার্সারিতে দেখেছিলাম, খুব যত্ন না নিলে এর গাছ বাড়ে না। কে দিয়েছে এই গিফট, রূপা?’ রূপা ছোট্ট করে বলে, ‘আমার এক বন্ধু’। লোকটা বলে, ‘কোথায় থাকেন তিনি? তাঁকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আমার। নিশ্চয়ই খুব বড় আর্টিস্ট’। উত্তর মেলবার আগেই নব্যেন্দু ঘরে ঢোকে। গমগমে গলায় বলে, ‘সেলিব্রেশানের সময় হল এবার’। সেদিনটা সকলের সাথে পরিচয় করে, হৈ-হুল্লোড়ে বেশ ভালই কাটল রূপার। দুদিন পরে ধীরে ধীরে ছবির ফুলদুটো শুকিয়ে গেল। ছবিটাকে এখন আর তত ভাল লাগে না। রূপা বুঝেছিল যে এটা চয়নই তাকে দিয়েছে, কিন্তু নাম তো ছিল না তাতে। তাই রূপার মন থেকে সন্দেহটা কিছুতেই দূর হচ্ছিল না। সে ঠিক করল বাড়িতে ফোন করবে, তারপর চয়নের সাথে যোগাযোগ করে নেবে। তাহলেই বোঝা যাবে চয়নই তাকে সেই উপহার দিয়েছিল কিনা। বাড়িতে নতুন ফোন নেওয়াতে এই সুবিধাটা পাওয়া যায়। যখন-তখন বাড়িতে ফোন করে বাড়ির খোঁজ খবর নেওয়া যায়। সে তার চিন্তামাফিক ফোন করে বাড়িতে। মার গলা আসে, ‘হ্যালো’। - ‘হ্যালো, মা। কেমন আছো তোমরা?’ - ‘ভালই আছি মা। তোরা কেমন আছিস?’ মায়ের গলাটা কেমন একটু বিষণ্ণ শোনায়। - ‘আমরাও ভাল আছি। তোমার শরীর খারাপ নাকি?’ রূপার প্রশ্নে মা একেবারে ভেঙে পড়ে, ‘জানিস তো মা, চয়ন মারা গেছে’। রূপা চমকে ওঠে, চিৎকার করে বলে, ‘কি বলছ কি তুমি? কি করে?’ - পাগল ছেলের কাণ্ড আর কি! ক’দিন আগে ওনার শখ হল উনি ফুলগাছ লাগাবেন। চারা এনে বসাল ফুলগাছ। কত যত্ন, কত পরিশ্রম করে কি সুন্দর ফুল ধরাল তাতে। তুই যদি দেখতিস তো চমকে উঠতিস। আমিও তো গ্রামের মেয়ে, কিন্তু অত সুন্দর রঙবেরঙের ফুল আমিও কোথাও দেখিনি। ভোররাত থাকতে উঠে গাছের চর্চা করত। বাধা দিতে গেলেই বলত, এছাড়া আর সময় কোথায় বল। সারাটা দিনই তো দোকানের কাজে থাকতে হয়। আর এই কনকনে শীতে কাজ করলে যা হয়। নিউমোনিয়া ধরে গেল। আমিও বাতের ব্যথায় আর দেখতে যেতে পারতাম না। একদিন তোর বাবা গিয়ে দেখে ছেলেটা জ্বরে কাতরাচ্ছে। সুজন ডাক্তারকে খবর দিয়েই সে বলল আর কিছু করার নেই। রোগ অনেক বেড়ে গেছে। আর কোন আশা নেই। বড্ড খারাপ লাগে রে। একটু দম নিয়ে মা আবার বলতে শুরু করে, ‘শেষ দিনগুলোয় ও তোর কথা খুব বলছিল। হয়ত দেখতে চাইছিল তোকে। মুখ ফুটে তো কিছু বলে না। হ্যালো হ্যালো, রূপা আছিস তো ফোনে?’ কেউ সাড়া দেয় না। দেবে কি করে? ফোন ফেলে রূপা যে তখন বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। অঝোরে কেঁদে চলেছে সে অতি সাধারণ এক ‘গেঁয়ো’ যুবকের জন্য। ফেসবুক লাইভেই মেয়েরা কেমন হট হয় দেখুন আমাদের সমাজের মেয়েরা কি এমনি লাইভ ভিডিও করে ভারতি মেয়েরা এমনি ভাবে ফেসবুকেই লাইভ হট হয় কেনো দেশী মেয়েরা ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে এমন হট হয় দেশী মেয়েরা ভালোবাসার টানে এমনি লাইভ হট ভিডিও দেয় দেশী মডেলরা কিভাবে পারে এমন হট লাইভ ভিডিও দিলে দিয়েই দিলো তামান্না তার হট লাইভ ভিডিওটা এমন খারাফ ভাবে এই লাইভ হট ভিডিও দিলো মেয়েটা ভালো মেয়েরা এমন হট ভিডিও দেয় না ফেসবুক লাইভেই লাইভ চলাকালে এ কেমন আচরণ করিলো দেশি যুবতি ভালোবাসার টানে এমনি হট লাইভ ভিডিও দিলো ফেসবুকে প্রেম করে লাইভে এসে ভিডিও ছাড়া কি অপরাধ নয় বন্ধুরা পরী বিবির স্মৃতি পুরোপুরি ফিকে হয়ে যায়নি। লোক এখনও মাঝে মধ্যে কথা প্রসঙ্গে পরী বিবির রুপের উদাহরণ দেয়। তবে নওয়াব মহল পরিত্যক্ত হয়ে গেছে বহুদিন হল। যত্নের অভাবে মেঝেতে শ্যাওলা জমেছে, দেয়ালে ইতস্তত অশ্বত্থ। উড়িষ্যা থেকে বানিয়ে আনানো মহার্ঘ সেগুন কাঠের পালঙ্কটার ও অবস্থা প্রায় যায় যায়। এক কোনে সেটি ক্যাঁতরে পড়েছিল যক্ষ্মা রোগীর মত। পরী বিবির খাস কামরাটা দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পড়ে আছে। সুপারী বাগানের সাথে লাগোয়া খড়খড়ি জানালাটা দীর্ঘদিন জমাটই ছিল। সময়ের ঘুনপোকারা ক্রমান্বয়ে তাতে চিড় ধরায়। একদিন একটুকরো নবীন রোদ্দুর সেই ফোকর দিয়ে উকি মেরে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পাশের বর্ষীয়ান সুপারী গাছটা সেটা বুঝতে পেরে সন্ত্রস্ত কিশোরের চোখ চেপে ধরে। পরদিন খুব প্রভাতে সেই কিশোর রোদ্দুরটি পা টিপে টিপে আবার ফিরে এল, সাথে কজন ভাইবেরাদর। সারারাত ইনসমনিয়ায় ভুগে বুড়ো সুপারী গাছটা সে সময় অল্প অল্প ডুলছিল। নবীন রোদ্দুরের পায়ের শব্দ শুনে সে বিরক্তভাবে চোখ মেলে চেয়ে দেখে, তারপর পাশ ফিরে শোয়। এরপর থেকে নবীন রোদ্দুর প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে পরী বিবির কামরায় আসা শুরু করলো। দীর্ঘদিনের আবদ্ধ কামরা প্রানের স্পর্শ পায়। নবীন রোদ্দুর সারাদিন ঘুরে ঘুরে কচি হাতে কামরার আসবাবপত্র ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে। পুরোনো রঙচটা পিয়ানোটায় মাঝে মধ্যে টুংটাং শব্দ হয়। সারাদিন-দুপুর পর্যন্ত চলে কিশোর রোদ্দুরের দুরন্তপনা। বিকেলের দিকে তার দুরন্তপনা কিছুটা কমে আর সন্ধ্যা হলেই সে দলবল সমেত থুড়থুড়ে বটগাছটার ঝুরির ফাঁক দিয়ে ভোঁ দৌড় দেয়। রোদ্দুরের বিদায়ের পর ধূলিকণার দল ও আর সেখানে থাকার সাহস পায়না। হুড়মুড় করে ওরাও সব দলবেঁধে বের হয়ে আসে, বুড়ো সুপারী গাছটা কাশতে কাশতে অস্থির হয়ে পড়ে... এরপর রাত নেমে আসলেই সবকিছু একেবারে নিঝুম, সুনসান। নবীন রোদ্দুর কখনো সেগুন কাঠের সেই পালঙ্কটার নিচ পর্যন্ত যেতে পারেনি। বহুকাল ধরে সেখানটায় কোন প্রানের স্পন্দন কিংবা কম্পন অনুভূত হয়নি। এই যে আটলান্টিক সাগরের তলদেশ- লোকালয় থেকে সেটি কতদূর, কত অনতিক্রম্য, অথচ সেখানেও কত মাছ, বালিকনা কিংবা ক্ষুদ্র শৈবাল দিনরাত ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু নওয়াব মহলের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পরী বিবির অতি প্রিয় সেগুন কাঠে বানানো পালঙ্কের নিচের জায়গাটির কোথাও এতটুকু আলোড়ন নেই। সময় এখানে একেবারেই বাকহীন, বধির... অর্থহীন। বহুকাল আগে একবার অবশ্য এক নির্বোধ ইঁদুর কোথা থেকে যেন গটগট করে হেঁটে এসেছিল। পালঙ্কের ঠিক নিচটায় এসে গম্ভীরভাবে কি যেন একটা ভাবলো... তারপর যেমনটা এসেছিল, ঠিক তেমনটাই চলে গিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে সেই মাথামোটা ইঁদুরের আগমন-প্রস্থানের চিত্রটি এ গল্পে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে, তবে সেই স্বল্পবুদ্ধির অপরিণামদর্শী ইঁদুরই কিন্তু এ পর্যায়ে আমাদের গল্পের মূল স্তরে প্রবেশ করাবে। সেদিন সেই ইঁদুরটি তার যাত্রাপথের একপর্যায়ে একমুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল। খালি চোখে ব্যাপারটি অহেতুক কিংবা অকিঞ্চিৎকর মনে হলেও আপনি যদি চোখ কচলে আরেকটু গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করতেন, তবে দেখতে পেতেন পালঙ্কের নিচের জমাট আঁধারের মাঝে একটা অতি প্রাচীন সিলভারের কৌটো পড়ে ছিল। এরপর দীর্ঘদিন ধরে আবার সবকিছু সুনসান। ইঁদুরটা আর কোনদিন ভুলেও এদিকটায় ফিরে আসেনি। নবীন রোদ্দুর তার যৌবনের সূচনালগ্নেই মেঘের প্রেমে মশগুল হয়েছে। পরী বিবির খাস কামরার প্রতি তার আর কোন আগ্রহ নেই। বেয়ারা অশ্বত্থের শেকড় ক্রমান্বয়ে জানালার সেই ফোকরখানি বুজিয়ে দিতে থাকে। পরী বিবির খাস কামরা একসময় পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। নবীন রোদ্দুর, শিশু ধূলিকণা কিংবা সেই মুসাফির মূষিকছানা- কেউই আর সেখান পর্যন্ত পৌছুতে পারেনা। তবে মাঝে মধ্যে খুব নিশীথে পশ্চিমের ঘাট থেকে তরুন বাঁশির সুর দুঃসাহসিক অভিযানে বের হয়ে সেই কৌটোটার ধাতব দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছে যেত, কিন্তু ততদিনে যে সেই নিঃসঙ্গ কৌটোটি একেবারে নিরাসক্ত হয়ে গেছে। অশ্বত্থের দলও এতোদিনে বুঝে গেছে- এ রাজ্যে তাদের আর কেউ আটকাতে আসবেনা। সর্বভুক রাক্ষসের মত গগনবিদারী উল্লাসে ওরা সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়, সাঁড়াশির মত শক্ত শেকড়ে পিষে ফেলে মহলের বুড়ো ঝুরঝুরে ইটগুলোকে। মহলের পতন একেবারে আসন্ন হয়ে গেছে, পুরোনো সিলভারের কৌটোটি ও বুঝতে পারে, খুব শীঘ্রই সে চাপা পড়ে যাবে ইট কাঠের স্তুপের নিচে। মাঝে মধ্যে খুব গোপনে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আক্ষেপ করে। বহুদিন আগে ষোড়শী পরী বিবি কোন এক একান্ত দুপুরে এই কৌটোর ভেতরে এক টুকরো রেশমের রুমাল ভরে রেখেছিলেন, আর সেই সাথেই কৌটোর ভেতর বন্দি হয়ে গিয়েছিল পরী বিবির একটুখানি নিঃশ্বাস, চোখের জল আর আত্মার ছোট একটি অংশ। এরপর প্রাসাদের পতন হয়েছে দীর্ঘদিন হল, বন্দী নওয়াবকে পাঠানো হয়েছিল আরাকান রাজ্যের জেলে আর পরী বিবি সম্ভ্রম বাঁচিয়েছিলেন প্রাসাদের পাঁচিল থেকে লাফিয়ে পড়ে। শুধু সিলভারে সেই কৌটোটির কোন মুক্তি নেই, অন্তহীন সময় ধরে সে যেন কিশোরী রাণীর দীর্ঘশ্বাস বুকে ধারন করে বসে আছে। ফার্সি ঠিকাদার ইমারত পোক্ত করার অভিপ্রায়ে ছাদের মাঝে মাঝে রেললাইনের স্লিপার বসিয়ে দিয়েছিলেন। সেগুলোই আজ প্রকারান্তরে ভীষণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাকশক্তিহীন দৈত্যের মত সেগুলো চাপা স্বরে গজরাচ্ছিল। এমন সময় কামরার পুরোনো ভারী দরজাটা হঠাৎ নড়ে ওঠে, বহুদিনের জমাট নিরবতা ভেঙ্গে যায়। আধবোজা দরজার একটুখানি ফাক দিয়েই আলতোভাবে কামরায় ঢুকে পড়ে চঞ্চলমতি এক দ্বাদশী। দীর্ঘদিনের পথপরিক্রমাতেও তার মুখশ্রীতে পূর্বপুরুষদের আদলটি অক্ষুণ্ণ থেকেছে। লঘুপায়ে কয়েক তাল নেচেই সে নির্ভুলভাবে পৌঁছে যায় জমাট আঁধারে পড়ে থাকা কৌটোটির কাছে। নিঃসঙ্গ কৌটোর ধাতব বুকের স্থির বায়ুতে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। বদ্ধ কামরার জমাট বাতাসে নেচে ওঠে সুগন্ধি রেণুরা। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে, মুক্তি এখন কেবল সময়ের ব্যাপার ... ১ দুই মাস আগে এই ঘরে একটা মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ইন্দোনেশীয়ান খাদ্দামা জামী ছিলো অবিবাহিতা। সামনের ছুটিতে দেশে গেলে তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। বুড়ো কফিল সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। এই মৃত্যু নিয়ে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয়নি। রান্না ঘরের পাশে ছোট্ট একটা ঘর। ষ্টোর রুম বলা যায়। কাঠের কয়েকটি খালি বাক্স পরে আছে ঘরের কোনে। আরেক পাশে পুরোনো জামা কাপড়ের স্তুপ। মেঝেতে দুটি বিছানা। একটি বিছানা এখন শূন্য। সে বিছানায় জামী থাকতো। মর্জিনা এই ঘরে এখন একা থাকে। মর্জিনা এখন ঘরের বাতি বন্ধ করে ঘুমাতে ভয় পায়। অন্ধকারে মনে হয় সিলিং ফ্যানের সাথে জামীর লাশ ঝুলে আছে। ঝুলে থাকা লাশ মর্জিনাকে ফিসফিস করে বলছে - পালিয়ে যা মর্জিনা। তুইও বাঁচবি না। পালিয়ে যা... প্রথম যে রাতে মর্জিনা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে বুড়ো দানবের ছোট ছেলে ঘরে ঢুকে মর্জিনার বুকে পিঠে লাত্থি দেয় আর অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এর পর থেকে ভয়ে চিৎকার দিতেও ভয় হয় মর্জিনার। বুড়ো সাদা দানবটা আজ রাতেও ঝাপিয়ে পড়বে মর্জিনার উপর। এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন পথ নেই। আজ মর্জিনার শরির খারাপ। মাসের বিশেষ দিন। দানবটা সেই অজুহাত মানে না। পশুসুলভ যৌনাচারের একাদিক বিকল্প পথ জানা আছে তার। বুড়োর ছেলেটা তবু মানে। বুড়ো দানবটা মানে না। ২ গ্র্রামের শত শত পরিবার ডাক পিয়ন মফিজের অপেক্ষায় থাকে। চিঠির অপেক্ষায় থেকে অনেকেই মফিজের বাড়ি চলে আসে প্রিয় মানুষের চিঠির খোজ নিতে। ফজল মাষ্টারের মেয়ে আনোয়ারা প্রতিদিন বিকেলে বাসায় এসে কান্নাকাটি করে। দেড় মাস স্বামীর কোন চিঠি আসে না। গত মাসে পরিবারের খরচের টাকা আসে নি। মফিজ তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দেয় -মারে অপেক্ষা কর তর জামাই আল্লার রহমতে ভালো আছে। যেদিন সত্যি সত্যি চিঠি আসে আনন্দে চোখে জল নিয়ে চিঠি খুলে অজ্ঞান হয়ে মফিজের বাড়ির উঠানে লুটিয়ে পড়ে। মফিজ চিৎকার দিয়ে ডাকে -মা মর্জিনা, জলদি বদনা ভইরা পানি নিয়া আয়। মর্জিনা দৌড়ে পানি নিয়ে আসে। আনোয়ারার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর চোখ খোলে আনোয়ারা। আবার জ্ঞান হারায়। আগামী শুক্কুরবার বাদ জুম্মা প্রকাশ্যে তার স্বামীর শিরচ্ছেদ করা হবে। উনিশশ ছিয়াশি সাল। মর্জিনা তখন ছয় বছরের শিশু। সেদিন বাবার চোখে জল দেখে কিছু না বুঝেই সেও কেঁদে ফেলে। ৩ আজ রাতে ঘুম হবে না মর্জিনার। আজ রাত শুধু কেঁদে ভাসাবার। সেই দিন গুলো মনে পড়ছে খুব। নীলক্ষিয়ার চরে ছোট্ট সেই গ্রাম। পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ। মরিচের ক্ষেতে পাকা মরিচে লাল হয়ে আছে মাঠের পর মাঠ। গোটা দশেক ছাগল নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরে মর্জিনা। বাড়ির উঠানে বেঞ্চে বসে আছে চার পাঁচ জন লোক। এক দেখাতেই পছন্দ। বর ট্রাক ড্রাইভার। সন্ধ্যায় মা খালারা মিলে গোসল দেয় মর্জিনাকে। রাতেই বউ তুলে নিয়ে যায়। এক জাতের পুরুষ আছে এরা মনে করে একটা বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর নারীর আর দেয়ার কিছু থাকে না। মর্জিনার বর খালেক ড্রাইভার সেই জাতের পুরুষ। ঘাটে ঘাটে নানা রকম নারীর শরির ছুয়ে চেখে দেখা খালেকের মন ধরে রাখতে পারেনি মর্জিনা। ছেলেটা জন্মের পর মর্জিনার গা থেকে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকে খালেকের নাকে। মাস ছয়েকের মাথায় খালেক নতুন বউ নিয়ে বাড়িতে উঠে। গায়ের রঙ মর্জিনার চাইতে উজ্জল। কেউ কেউ বলে নারায়নগঞ্জ পতিতালয় থেকে নিয়ে আসা মেয়েটিকে খালেক বিয়ে করেনি। ছয় মাসের শিশু পুত্রকে নিয়ে মর্জিনা বাপের বাড়ি ফিরে যায়। এর মাত্র কিছু দিন আগে মা মারা যায়। মর্জিনার বড় বোন আমিনার বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামেই। বোনের জামাই খুব ভালো মানুষ। শম্ভুগঞ্জ বাজারে ফার্নিচারের দোকান। বছর তিনেক ধরে প্যারালাইজড শ্বশুরের খোঁজ খবর রাখে। মফিজের ছেলে সন্তানের অভাব আমিনার জামাই জব্বর পূরণ করে দিয়েছে। মর্জিনা বাপের বাড়ি ফিরে গেলে বাবার সেবা যত্নের জন্য সকাল বিকাল আসতে হয় না। কিন্তু বাবার মন আরও বেশী বিষণ্ণ হয়ে যায়। মেয়েটার কি হবে? এর ভবিষ্যৎ কি? জমি বিক্রি করে আরব দেশে চাকরী করতে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মর্জিনাকে। ৪ মর্জিনা নয় মাসের শিশু সন্তানকে বড় বোন আমিনার কোলে তুলে দিয়ে জীবিকার খোঁজে চলে আসে সৌদি আরবের রিয়াদে। গত ছয় বছরে ছেলেটা অনেক বড় হয়েছে। এর মধ্যে বাবা মারা যায়। বাবার লাশ দেখার সুযোগ হয়নি। ছেলেটা আমিনাকে মা ডাকে। মর্জিনা জানে বড় বোনের কাছে তার সন্তান নিরাপদে আছে। তার পরও এই ভেবে বুকটা হাহাকার করে -সন্তান পেটে ধরার পরও তার ভাগ্যে বুঝি মা ডাক শুনার সুযোগ হবে না। মোবাইলে ফোন করে ছেলের সাথে কথা বলে এক দুই দিন পর পর। কিন্তু ছেলের মধ্যে মাকে নিয়ে কোন আবেগ নেই। মায়ের খুব শুনতে ইচ্ছে হয় ছেলে তাকে বলছে -মা তুমি কবে আইবা? কিন্তু ছেলে তাকে এমন কোন প্রশ্ন করে না। তার কাছে মনে হয় আমিনা তার আসল মা। আরেক জন মায়ের মুখ সে মনের আয়নায় ভাসাতে পারে না। সেদিন ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে ছেলের নিঃস্পৃহ উত্তরে দুই চোখে জল গড়িয়ে পড়ে। মর্জিনা জানতে চায় -বাবা ভালা আছ? -হুম... ছেলে উত্তর দেয়। -ভাত খাইছো? -হুম... -ইশকুলে যাও? -হুম... -তোমার খালা তোমারে আদর করে? -আমার খালা নাই। -আইচ্ছা রাইখ্যা দেই বাজান। -আইচ্ছা। ৫ মর্জিনা তার কফিলের নির্যাতনের কথা কাউকে বলে না। বলে কোন লাভ নেই। বাবার কাছে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাবা নেই কিন্তু বাবার কবর নিজ হাতে ছুঁয়ে না দেখা পর্যন্ত তার বিশ্বাস হবে না বাবা বেঁচে নেই। তার মনে হয় বাবা তার চিঠির অপেক্ষায় আছে। কাগজ কলম নিয়ে বাবার কাছে লিখতে শুরু করে চিঠি। বাবা, আমি ভালা নাই বাবা। তুমি কইছিলা বাবা এই আরব দেশে সোনার মানুষ থাকে, কই তোমার সোনার মানুষ? এই দেশে উল্টা নিয়ম। আমার মালিক আমারে যেই ভাবে ইচ্ছা নির্যাতন করে। কোন বিচার নাই। প্রকাশ করলে উল্টা আমার বিচার হইবো। আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম বাবা। আল্লায় যেন এর বিচার করে। বাবা, একটা খবর শুইনা মনটা আরও বেশী খারাপ হইয়া গেলো। শুনলাম আমগো দেশের সরকার নাকি আবারো এই দেশে কাজের মেয়ে পাঠাইতাছে। মা বইনের ইজ্জত বেইচ্চা দেশে টেকা কামানির কি দরকার বাবা? তুমি ভালা থাইকো বাবা। আমি ভালা নাই। ইতি তোমার আদরের মর্জিনা চোখের জল মুছতে মুছতে মর্জিনা বাবার কাছে লেখা চিঠিটা ভাঁজ করে বালিশের নীচে রেখে দেয়। তার আশা কোন এক ডাকে এই চিঠি পৌছবে তার বাবার হাতে। ফেসবুক লাইভেই মেয়েরা কেমন হট হয় দেখুন আমাদের সমাজের মেয়েরা কি এমনি লাইভ ভিডিও করে ভারতি মেয়েরা এমনি ভাবে ফেসবুকেই লাইভ হট হয় কেনো দেশী মেয়েরা ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে এমন হট হয় দেশী মেয়েরা ভালোবাসার টানে এমনি লাইভ হট ভিডিও দেয় দেশী মডেলরা কিভাবে পারে এমন হট লাইভ ভিডিও দিলে দিয়েই দিলো তামান্না তার হট লাইভ ভিডিওটা এমন খারাফ ভাবে এই লাইভ হট ভিডিও দিলো মেয়েটা ভালো মেয়েরা এমন হট ভিডিও দেয় না ফেসবুক লাইভেই লাইভ চলাকালে এ কেমন আচরণ করিলো দেশি যুবতি ভালোবাসার টানে এমনি হট লাইভ ভিডিও দিলো ফেসবুকে প্রেম করে লাইভে এসে ভিডিও ছাড়া কি অপরাধ নয় বন্ধুরা আজকের আকাশটা ধূসর মেঘে ঢাকা! বৃষ্টির মত টুপটুপ করে শিশির পড়ছে...! ফজরের নামাজ পড়ে মিনহাজ উদ্দিন বারবার জানালার কাছে গিয়ে রাস্তার দিকে দেখছে। সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে নিজের উপর তার ভীষণ রাগ লাগছে...! অনেকক্ষণ ধরে সে বুঝতে চেষ্টা করছে এখন কয়টা বাজে? উনি যে ঘরে থাকেন সে ঘরে কোন ঘড়ি নেই। "রিটায়ার্ড মানুষের সময় জেনে কী হবে...! তাদের ঘড়ির কোন প্রয়োজন আছে নাকি!?” আপন মনে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কাঠের লাঠিতে ভর দিয়ে আবার জানালা দিয়ে দেখে- "নাহ কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না! রাস্তায় কেউ যেমন বের হয়নি তেমনি আকাশেও সূর্যের দেখা নেই!” এদিকে বাসার সবাই এখনো ঘুম! খাবার ঘরে অনেক অন্ধকার। ঘরটা ডিঙিয়ে বাথরুমে যেতে হয়! কিন্তু লাঠির ঠক ঠক শব্দে যদি সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়? এই ভাবনাও তাড়া করে ফেরে বারবার...! দরোজাটা সামান্য ফাঁক করে উঁকি দেয় রান্না ঘরের দিকে। বাম কানটা খাঁড়া করে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করে! “নবাবজাদি এহনও নাহে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছে! ছেমড়ি তুই জানিস সকালে উঠে এককাপ র'চা আর দুইখান টোষ্ট বিস্কুট না খালি আমার গ্যাস্টিকের ব্যথা ওঠে! তোর ঘুম ক্যান ভাঙে না!” রাগে গজগজ করতে করতে আবার এসে বিছানায় বসে। ব্যথাটার কথা ভেবে দুই গ্লাস পানি খেয়েছে। এখন তো আবার বাথরুমে যেতে হবে। অস্থিরতায় হাঁটাহাঁটি শুরু করে দেয়। তবে ফ্লোরে লাঠি লেগে যেন কোন শব্দ না হয় সেই দিকে খুব সতর্ক সে। আস্তে আস্তে অনেক কষ্টে বাথরুম সেরে কেবল বের হয়েছে...! শোনে খুব নিচু স্বরে কুলসুম বলছে-"দাদা আপনের ঠকাঠকে মোর তো ঘুম ছুইটা গ্যাছে! আইজ গো ছুটির দিনে কারো ঘুম ভাঙে না। আর আফনে সেই বিহানবেলা থাইকা খট্টর খট্ট্রর শুরু করছেন!” -আরে ছেমড়ি আমার ঘরে চা আর টোষ্ট দিয়া যা। কথা কম ক না লি ফরে থাপড়াই দিবানি। মেয়েটা বেহায়ার মত মুখে শাড়ীর আঁচল দিয়ে হাসে। হাসতে হাসতে বলে - -দাদা আপনের কী মুইতের রোগে ধরছে? চোখ বড় বড় করে রাগ দেখায় মিনহাজ উদ্দিন। মনে মনে বলে "এই মেয়ে তো অনেক পাকনা। ডায়াবেটিকসকে বলে মুইতের রোগ! বেয়াদব কোথাকার।" জানালা দিয়ে খাবার রুমে আসা সামান্য আলোতে দেয়ালে রাখা ঘড়ির দিকে তাকায়। মনে পড়ে এই ঘড়িটা যেবার কোলকাতা গিয়েছিল মলিকে নিয়ে,সেবার কিনে এনেছিল। ঘড়ির সেকেন্ড ও ঘণ্টার কাঁটা অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে! এখন বাজে সাড়ে সাতটা! নিজের ঘরে ঢুকে পায়জামাটা পরে নেয়। অনেক ঠাণ্ডা পড়েছে আজ। সাধারণত যেদিন কুয়াশা পড়ে সেদিন ঠাণ্ডাটা একটু কম থাকে। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে উল্টো। সে এতদিন যেখানে যা দেখে এসেছে, তার সব কিছুই আজকাল উল্টো হচ্ছে...। সে যা কিছু দেখেছে এখন সেসব সবাই ব্যাকডেটেট বলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে! তারপর যার যার মত করে নিজেরাই নিজেদের কাজে অত্যাধুনিকতার লেবাস পরিয়ে নিচ্ছে! "আধুনিকতা যদি হয় অসম্মান অশ্লীল অসভ্যতা অকল্যাণ তাহলে সে আধুনিকতার প্রয়োজন কী!” মিনহাজ উদ্দিন সেই ছোটবেলায় দেখেছে তার মা প্রতিদিনই;বাসার সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই দাদা দাদীকে সকালের নাস্তা দিত! তারপর নিজের হাতেই ওষুধ খাইয়ে দিত। কতদিন সে নিজেই দাদা দাদীর ওষুধ পড়ে পড়ে মায়ের হাতে দিয়েছে! সেই সময়ে বাড়ীর বউয়েরা ঘরে থাকা শিশু ও মুরুব্বীদের প্রতি অন্যদের থেকে যেন একটু বাড়তি খেয়ালই নিত! এই বাড়তি খেয়ালে বাড়ীর বউ ঝিয়েরা অন্যরকম এক স্বর্গীয় আনন্দ খুঁজে পেত। মুরুব্বীদের সেবা শুশ্রূষা করতে পেরে তৃপ্তি নিয়ে সারাদিন আনন্দে কাঁটিয়ে দিত। মলিকেও দেখেছে মা বাবার সেবা করতে। মনে পড়ে একদিনের ঘটনা- সেদিন মলির প্রসব বেদনা উঠেছে। যা দেখে মিনহাজ অফিসে যেতে চেয়েও আবার যায়নি। ফোন করে অফিসে বলে দিয়েছে সে আজ আসতে পারবে না। মলির সারা মুখ ব্যথায় নীল হয়ে গেছে অথচ ঘরের কাউকেই বুঝতে দিচ্ছে না। ওর মনে হচ্ছিল ওকে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দেয় অথবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু ওর জেদ বাবাকে আগে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়াবে তারপর সে ডাক্তারের কাছে যাবে। বাবা কিন্তু মলির কষ্ট বুঝতে পেরেছিল! সেদিন আমার অসুস্থ্য প্যারালাইজড বাবাও ছেলে বৌয়ের পাগলামি দেখে রেগে গিয়েছিলেন। সেদিন অবশ্য মলিকে হাসপাতালে নিতে হয়নি। বাসায় নার্স নিয়ে আসলে জন্ম নিয়েছিল আফজাল। কিন্তু এখনকার ছেলে বউ মেয়েরা বড়দের নিয়ে কোন ভাবনা নেই। কাজের মেয়েই তাঁদেরকে দেখাশোনা করে! মাঝে মাঝে সে চোখেও ভাল দেখে না। ওষুধের নাম পড়তে কষ্ট হয়। ডায়াবেটিকস হলে এই এক সমস্যা,চোখের জ্যোতি কমে যায়! "নাহ ছেমড়ি এখনও চা দিয়ে গেল না।" মিনহাজ আবার দরোজায় কান লাগিয়ে শব্দ শোনার চেষ্টা করে। "কেউ আসছে এদিকে!" খট খট আওয়াজ তুলে দ্রুত খাটে গিয়ে বসে। দীনা কী সব যেন বলছে কাজের মেয়েটাকে। মনে হচ্ছে আজকে তার মেজাজ অনেক খারাপ! "নবাবজাদী ঘুম তাহলে ভেঙেছে! সারা রাত জেগে থাকবে আর দুপুর পর্যন্ত ঘুমাবে! ছেলেও একখান হয়ছে বউকে কিছুই বলতে পারে না! আরে এটাকে কী সুখে থাকা বলে? লাট সাহেবের ব্যটা রাত করে ঘরে ফিরবে...! বাবা হয়ে কিছু বলতে গেলেই বলবে- -"আপনি এখনকার কাজ বাজ বুঝবেন না আব্বা,অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়!” -"নাহ তা কী আর আমি বুঝিনে! আমি তো আর চাকরি বাকরি করিনি! হাওয়া খাওয়াই তোগের বড় করিছি! সবাই ভাবে বুড়ো হইছো,রিটায়ার্ড হইছো এখন বাপু ওপারের ট্রেনে উইঠে পড়! আমার কী আমি আর কয়দিন...” হাতের লাঠির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মিনহাজ উদ্দিন বিড়বিড় করতেই থাকে! দরজা ঠেলে ঘরে আসে কুলসুম। ওর হাতের ব্যগটাই আগে নজরে আসে! মেজাজ বিগড়ে যায়। এমনিতে কাল রাত থেকে জ্বর জ্বর লাগছে তার উপর হাড় কাঁপানো শীত...! এখন সে বাইরে যাবে না! কুলসুম যে ট্রেতে চা আর বিস্কিট নিয়ে এসেছে সেদিকে না তাকিয়েই,মুখটা ঘুরিয়ে নেয় ছোট্ট বাচ্চাদের মত করে! রাগ দেখিয়ে বলে- -এই ছেমড়ি এখন তোর ঐ শরবত আমি খাব না! কয়টা বাজে দেখিসনি? নাস্তা দে...! -দাদা আটা নাই...আগে আনতে হবে হেরপর রুটি বানামু...! -তোর রুটি তুই খা...! মুখ ঝামটা দেয় মিনহাজ উদ্দিন।সে এমনটা আগে কখনো করেনি। কিন্তু ইদানীং তার প্রতি সবাই অবহেলা করছে। যা দেখে সে অবাক হয়! নিজেকে বোঝা ভেবে নিজেকেই ধিক্কার দেয়। ওর জন্য কারো সমস্যা বা অশান্তি হোক সে কোনদিন চায়নি! একমাত্র আদরের সন্তান আফজাল। ছেলেটা কখন ঘরে আসে আর কখন বের হয় তার কিছুই সে জানে না।"বুড়ো বাবাকে একটু দেখে যেতে পারে না! এইটা কোন কথা হল?” কুলসুমই ওর দেখাশুনা করে! যত রাগ সে মেয়েটার উপর ঝাড়ে। দীনা মাঝে মাঝে এসে বলবে- বাবা কী ঘুমাচ্ছেন?মিনহাজ উদ্দিন হেসে বলে - না মা এসো ভীতরে...কেন কিছু বলবা? - না ঠিক আছে কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছি না তো তাই! হু হু করে বুকের ভেতর থেকে গরম বাতাস বের হয়! মেয়েটা ছেলে মেয়ের দেখাশোনা ওদের লেখাপড়া সবকিছুই করে! অনেক কাজ এটা তাও সে বোঝে! কিন্তু তাই বলে কী দিনে একবার একটু এসে দেখবে না সে বেঁচে আছে না মরে গেছে? ছেলে ছেলে বউ সবাই যেন কেমন একটা ছাড়া ছাড়া সম্পর্ক রেখেছে ওর সাথে। সে সম্পর্কে নেই কোন দায়িত্ব বোধ! নেই কোন আন্তরিকতার লেশমাত্র...। এই সম্পর্ক ঠাণ্ডা শীতল অনুভূতি এনে ওকে ভীষণভাবে কষ্ট দেয়! মাঝে মাঝে ভাবে সে গ্রামে চলে যাবে। কিন্তু গ্রামে বাবার রেখে যাওয়া ভিটে মাটি মৃতপুরির অসুস্থ্য নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছে। আফজাল খদ্দের দেখছে পেলেই গ্রামের ঠিকানাটাও পর হয়ে যাবে। গ্রামের কথা মনে এলেই ছবির মত ভেসে উঠে হাজারো দৃশ্য! যে ছবি জ্বলজ্বল করে আগুণের মত...! যে ছবির তাপ এখনো মনে উত্তাপ এনে দেয়...! মনে পড়ে- মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সে যুদ্ধে গিয়েছিল বলে পাকসেনারা রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ওদের ঘরবাড়ি সব জ্বালিয়ে দিয়েছিল। মনে পড়ে দেশ স্বাধীন হবার পরে যখন সে গ্রামে ফিরে আসে!এসে দেখে তাদের বাড়িঘর এবং আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর নিয়ে জায়গাটা একেবারে জ্বলন্ত শ্মশান হয়ে আছে। তখনও ভিটে মাটি আগুনে পোড়া গন্ধ ছড়াচ্ছে। মিনহাজের মনে পড়ে যখন বাড়িতে এসে মা বাবা মলি কাউকেই পেল না! সে ধরেই নিয়েছিল ওরা কেউ হয়ত বেঁচে নেই! ও ভেবেই নিয়েছিল সবাই আগুনে জীবন্ত পুড়ে মারা গেছে ! আর হয়ত মলিকে তুলে নিয়ে গেছে। রাগে দুঃখে সেদিন প্রায় উম্মাদ হয়ে গিয়েছিল সে। কেউ বলতে পারে না ওরা সবাই কোথায়...! এই গ্রামে পাকসেনাদের সবচেয়ে পরম বন্ধু ছিল গ্রামের মাতব্বর। মিনহাজ মনে মনে ভাবে আজ সে অস্ত্রটা মেজরের কাছে দিয়ে এসে ভুল করেছে! খালি হাতেই ছুটে যায় গ্রামের মাতবরের বাড়িতে...! কিন্তু সেখানে গিয়ে মাতবরকে পায় না। সে মাতবরের অপেক্ষায় বাড়ীর সামনের নাড়ার পালার আড়ালে বসে অপেক্ষা করে। সে সিদ্ধান্ত নেয় আজ এই মাতবরের সামনেই তার বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নেবে। অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাবা মা আর প্রিয়তমাকে নিয়ে কত স্মৃতি মনের পাতায় ভেসে উঠে! যে মানুষ আজ ছয়টা মাস শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে! সেই মানুষ আজ বাচ্চাদের মত করে প্রিয়জনের কথা ভেবে ফুঁপিয়ে কাঁদে! নিজেকেই নিজে ধিক্কার দেয়! ভাবে দেশ ও দেশের মানুষকে শত্রুর কাছ থেকে রক্ষা করতে পারলেও,আপন প্রিয়জনদের সে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে! এই দুঃখ ও অপরাধ বোধ তাকে দুর্বল করে দেয়। মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পায়! কুয়াশা ঘেরা অন্ধকারে চোখ তুলে দেখে কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে! পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো কাপড়ে ঢাকা। এক নারী কণ্ঠ খুব নিচু স্বরে বলে-"কোন কথা কইও না বাজান...আমার লগে আও" মিনহাজ কিছু না বলে অনুসরণ করে তাকে। গ্রামের জঙ্গলের অলিগলি পার হয়ে ওকে নিয়ে হাঁটতে থাকে রহস্যে আবৃত নারী। মিনহাজ এক সময় দেখে জঙ্গলের একেবারে গভীরে এসে থেমে গেছে নারী ছায়াটি। কোন ভণিতা না করে কথা বলে সে- -"তোমার বাবা মা যখন বুঝতে পারলো মিলিটারিরা বাড়ীর উঠানে আইসা পড়ছে। তখন তারা তোমার বউ রে নিয়া বাড়ীর পিছন দিকের দরজা দিয়া বাইর হইয়া আইছিল। কোন দিশা না পাইয়া ওরা সবাই আমাগো বাড়ীর ডোবার মধ্যে পলাইয়া আছিল।" মিনহাজ আর শুনতে চায়না। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে -তাইলে ওরা কই? সবাই বাইচা আছে? নারী কণ্ঠ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলে-সেই রাইতে এতো শীত পরছিল যে ডোবার পানি বরফের নাহান ঠাণ্ডা আছিল! মিনহাজ অন্ধকারেই নীচে বসে পড়ে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। সে জানে ওর বাবার শ্বাস কষ্ট ছিল। নিশ্চয় সে ওই ঠাণ্ডা পানিতে...! আর ভাবতে পারে না...! "সব আমার দোষ! আমারে আব্বা মা নিষেধ করিল যুদ্ধে না যাতি! সব আমার দোষ!” এমন সময় কেউ একজন ওর হাত দুটো ধরে! চেনা স্পর্শ অনুভব করে মিনহাজ। ওর কান্না থেমে যায়...! সে অবাক হয় একজনের কণ্ঠ শুনে- -"আমি বাইচে থাকতি আফনার আব্বা মায়ের কিছু হতি পারে আপনি ভাবলেন কেমনি?” মিনহাজ থরথর করে কেঁপে যায়! সমস্ত কথা যেন ফুরিয়ে যায় তার। হঠাৎ করে দাঁতে দাঁত লেগে ঠকাঠক শব্দ হতে থাকে। খুশির কাঁপন তোলে সারা শরীর...। দপ করে জ্বলে উঠে হ্যারিকেন! সে দেখতে পায় সে এতক্ষণ যেখানে দাঁড়িয়েছিল তা মাটির নিচের একটা ঘর! তখনও চেনা স্পর্শ হাতদুটো ধরে রেখেছে। "মলি...! " বুকের সাথে লেপটে ধরে মিনহাজ প্রিয়তমাকে। সামনে বাঁশের চৌকিতে চোখ যায়! বুড়ো অসুস্থ্য বাবা মা কে দেখে। ছুটে যায় তাদের কাছে। -কিন্তু এইহেনে তালি ক্যামন করে আসলো ? আর আমারে ওবা কিডা নিয়ে আসলো?"কথা শেষ হতেই রহস্যের সেই নারী এবার সামনে আসে। চমকে উঠে মিনহাজ উদ্দিন -"চাচী আফনে এইহানে!?” -"হ্যাঁ বাবা আমি...! সেদিন তোমার বউ কোন কিছু না ভাইবাই তোমার বাবা মারে আমার কাছে নিয়া আসে! আমি কী করব বুইজা পাই না। তোমার চাচা যা করছে আমি লজ্জাই মইরা যাই। তোমার চাচা জাগো শত্রু ভাইবা পুইড়া মারতে চাইছে? আমি তাগর জান বাচাইছি জানলে আমার উপরও নাইমা আইব মরণ!” মাতবর চাচার বউ কথা বলে যায় দৃড়তার সাথে। মিনহাজ আজ অন্যরকম একজন নারীকে দেখে। এই যুদ্ধ একজন সহজ সরল গ্রাম্য নারীকেও কত কঠোর হতে শিখিয়েছে! চাচী আবার বলে- -"আমার তখন মনে হইল স্বামীর এই অত্যাচার থামাইতে হয়ত আমি পারব না... কিন্তু যাদের উপর অত্যাচার করছে? আমি গোপনে হইলেও তাদের পাশে থাকবো! আর তাই আমার বিশ্বস্ত চাকর মতিরে দিয়া জঙ্গলের মধ্যে মাটির নিচে ঘর বানাইছি। যখন মাতবর দেশের শত্রুদের সাথে মিলে প্লান বানায় মানুষের ক্ষতি করার জন্য! আমি তখন মতিরে নিয়া বানাই তাদেরকে লুকাই রাখার জন্য এই ঘর। আর এই ঘরই একদিন কাজে লাগে বীর সন্তান মিনহাজ মিয়াঁর বাবা মা রে বাঁচাইতে! তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা দিতে।” মিনহাজ অবাক হয়ে দেখে টিমটিমে হ্যারিকেনের আলোতেও চকচক করছে চাচীর দুচোখ! আজ প্রায় তিনমাস ধরে বাবা মা আর মলিকে এখানে লুকিয়ে রেখেছে সে! জানে বেঁচে গেলেও শীতের রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় অনেক সময় ধরে ডোবার মাঝে থাকাতে! এবং অনেক ভয় পাবার কারণে বাবা সেদিন ছোট্ট একটা মাইল স্ট্রোক করে। যা সেই সময়ে কেউ বুঝতে পারেনি। সেই থেকে বাবার শরীরের নীচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে! মিনহাজ সেদিন মাতবরের বউয়ের কাছে বাবা মা এবং মলিকে বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞ হলেও, মাতবরকে সে ছেড়ে দেবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেনি এই মাতবরেরই বউয়ের অনুরোধে। স্বামীকে ক্ষমা করে দেবার জন্য সেদিন চাচী মিনহাজের কাছে হাত জোড় করেছিল। যে মানুষ বাবা মা প্রিয়তমা স্ত্রীকে হায়েনার লোভী দৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রেখে নতুন জীবন দিয়েছিল! সেই হায়েনাকে মেরে ফেলে মানুষটাকে বিধবা করে শাস্তি দিতে চায়নি সে! তবে একেবারে সাঁজা না দিলে যে অনেক স্বার্থপর হয়ে যাবে! আর তাই সে একদিন মাতবরকে প্রচণ্ড মারধর করে পা ভেঙে পঙ্গু করে দেয়। যা সে কাউকেই বুঝতে দেয় না। একজন দেশদ্রোহী রাজাকারের জন্য বেঁচে থেকে প্রতিক্ষণ মৃত যন্ত্রণার অনুভব পাওয়া! এর চেয়ে বড় সাঁজা আর কী হতে পারে!? তারপর মিনহাজ গ্রাম ছেড়ে সবাইকে নিয়ে চলে যায় শহরে...। মলি অনেক শখ করে এই বাড়িটা করেছে! এই শহরেই ও সবচেয়ে বেশিদিন চাকুরী করেছে এবং এখানেই রিটায়ারমেন্ট নিয়েছে। চেনা বাগান,চেনা গাছপালা! চেনাজানা সব মানুষগুলোর কারণে এই শহরের উপর কেমন যেন একটা মায়া জড়িয়ে গেছে! কিন্তু গ্রাম...! দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে...। ঠাণ্ডা চায়ে টোষ্ট ডুবিয়ে কামড় বসায় মিনহাজ উদ্দিন। খক খক করে কেশে যায়! "আরে ছেমড়ি পানি দিয়ে যায়নি!” কাশতে কাশতে দম বন্ধ হবার জোগাড়। কুলসুম গ্লাসে করে পানি নিয়ে দৌড়ে এসে এগিয়ে দেয়। মিনহাজ উদ্দিন পানি মুখে দিয়েই চিৎকার করে উঠে - উউরে ঠাণ্ডা রে...এই ছেমড়ি তোরে না কইছি গরম পানি মিশায়ে দিবি! ঠাণ্ডা পানিতে আমার দাঁত মাড়ি সিরসির করতিছে! ওহ রে...। বেহায়া মেয়েটা আবার হাসে - "হি হি দাদা আপনার দাঁত তো মোডে চাইরহান আর তো সব ফাঁকা...হি হি হি" মেয়েটা মাঝে মাঝে এভাবেই দাদার সাথে মজা করে। মিনহাজের সব রাগকে ও হাল্কা করে নেয়। মেয়েটা মাঝে মাঝে অনেক আপনের মত করে ওর যত্ন করে। ট্রে নিতে নিতে একটা লিস্ট আর টাকা এগিয়ে দেয়- -দাদা খালাম্মা বলছে লিস্ট ধরে ধরে বাজার আনতে -তোর খালু কই গেছে? ওরে বল বাজারে যেতে... -খালুই তো টাকা দিয়ে কইল আপনারে দিতে! সে অফিসে চলে গেছে। কথাটা বলে টাকা লিস্ট আর ব্যাগ রেখে গটগট করে চলে যায়। মিনহাজ সোয়েটারের উপরে শাল আর মাথায় মাঙ্কি টুপিটা জড়িয়ে অনিচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়। বাইরে তখনও টপটপ করে বৃষ্টির মত বড় বড় ফোঁটায় শিশির পড়ছে। লিস্টটা মেলে ধরে চোখের সামনে। তারপর মোড়ানো টাকাটা খুলে আঁতকে উঠে- "আরে এই টাকায় এতো কিছু হবে নাকি!? বাজারের যে চড়া দাম এতে তো অর্ধেক সদাইও হবে না।" নিজের পকেটে হাত দেয়। এইমাসে পেনশনের টাকা যা পেয়েছে তার থেকে এক হাজার টাকা হাত খরচ রেখে সব পাঠিয়ে দিয়েছে গ্রামে। গরীবদের মাঝে শীতের কাপড় কিনতে। গরীব বলতে দূরের কেউ না...খালাতো মামাতো আত্মীয় স্বজন। এই অভ্যাসটা মলির...আর সেইখান থেকে সঙ্গ দোষে ওর মাঝে ঢুকে গেছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখে পুরো টাকাটাই পকেটে আছে! বের করবে করবে করে আর বের করে রাখা হয়নি! "এই টাকা বাজারে খরচ করলে সারা মাস সে যে একটু বিড়ি আর মাঝে মাঝে ঘোষের দোকানে দৈ মিষ্টি খায় এইটা কীভাবে চালাবে? আর ওষুধ...? আচ্ছা আফজাল না হয় ওষুধের টাকাটা দিলো কিন্তু ওর অন্য খরচের কী হবে? নাতিগুলাও মাঝে মাঝে দাদুর কাছে হাত পাতে! কী করবে সে...?” ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে কি করবে। আচ্ছা আজকাল প্রায় মাসেই সে দেখছে পেনশনের টাকা পাবার পরপরই কোন না কোনভাবে ওর টাকা সংসারের কাজে খরচ হয়ে যায়! ছেলের কী কম আছ? মাঝে মাঝে ভাবে সত্যি কী আফজাল ওকে বাজার করতে বলে? ছেলেটা তো ওকে সরাসরিও বলতে পারে! এই উছিলায় না হয় একটু কথা বলা হবে! আহা ছেলেটার সাথে কতদিন একসাথে বসে খাওয়া হয় না! আবার কী বাড়ীর ভীতরে ঢুকে দীনার কাছ থেকে টাকা আনবে? "না না এইটা ঠিক হবে না!” দ্বিধাদ্বন্দ্বে বাড়ির সামনেই অনেকটা সময় পার করে দেয়। বাজার বেশ দূরে। ঠাণ্ডা না হলে সে হেঁটেই যেত। তখনও ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না! অসস্তি লাগছে। এমন সময় কুলসুম গেইট থেকে বের হয়ে তাকে দেখে প্রায় চিৎকার দিয়ে উঠে- - দাদা আফনে এহনতরি সদাই আনেন নাই! নাস্তা বানামু কহন! মিনহাজ উদ্দিন যেন লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চিন্তা করছিল আর ঝিমুচ্ছিল। চমকে উঠে বলে - এই ছেমড়ি আস্তে কতা ক! তোর খালু যে টাকা দিছে তাতে তো অর্ধেক মালও হবে না! - না হইলে আফনে টাকা পুরাই আনবেন। আপনে না দুইদিন আগে পেনশনের টাকা পায়ছেন? অবাক হয় মিনহাজ উদ্দিন কুলসুমের মুখে এমন কথা শুনে। ওর খুব রাগ হয়। রাগ হয় ছেলের উপর। রাগ হয় নিজের উপর! ঠাণ্ডাটা যেন ওর হাড়ের মজ্জাকে জমিয়ে দিচ্ছে। ঠকঠক করে কাঁপছে সে। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে...! সামনে একটা রিক্সা এসে টুং টুং করে বেল বাজায়-খালু যাইবেননি? কিছু না বলে রিকসায় উঠে বসে ফেসবুক লাইভেই মেয়েরা কেমন হট হয় দেখুন আমাদের সমাজের মেয়েরা কি এমনি লাইভ ভিডিও করে ভারতি মেয়েরা এমনি ভাবে ফেসবুকেই লাইভ হট হয় কেনো দেশী মেয়েরা ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে এমন হট হয় দেশী মেয়েরা ভালোবাসার টানে এমনি লাইভ হট ভিডিও দেয় দেশী মডেলরা কিভাবে পারে এমন হট লাইভ ভিডিও দিলে দিয়েই দিলো তামান্না তার হট লাইভ ভিডিওটা এমন খারাফ ভাবে এই লাইভ হট ভিডিও দিলো মেয়েটা ভালো মেয়েরা এমন হট ভিডিও দেয় না ফেসবুক লাইভেই লাইভ চলাকালে এ কেমন আচরণ করিলো দেশি যুবতি ভালোবাসার টানে এমনি হট লাইভ ভিডিও দিলো ফেসবুকে প্রেম করে লাইভে এসে ভিডিও ছাড়া কি অপরাধ নয় বন্ধুরা ...! বাতাসে সাঁতার কেটে রিকসা ছুটে চলে...! শীতটা যেন এখন আরও বেশী লাগে! মনে পড়ে যুদ্ধের সময়ে শত্রুদের ধ্বংস করতে প্রচণ্ড হিম ঠাণ্ডা পানিতে ডুব দিয়ে থেকেছে! আবার ছুটে গিয়ে বাজ পাখি হয়ে উড়াল দেবার মত করে সাঁতার কেটেছে। একসময় শত্রুর জাহাজ থেকে কিছুটা দূরে ঠাণ্ডা পানিতে দম বন্ধ করে ডুব দিয়ে দিয়ে জাহাজে এসে মাইন সেট করে রেখেছে। তখন কঠিন ঠাণ্ডাকেও ঠাণ্ডা মনে হত না। শত্রুকে শেষ করার লক্ষ্যে সমস্ত শরীরে ঠাণ্ডা যেন ভিড়তেই পারতো না। মনে পড়ে যেদিন সে মুক্তিসেনাদের নিয়ে প্রথম গ্রামে পা রেখেছিল? সেদিনও ছিল কনকনে ঠাণ্ডার দিন! সেদিন ওদেরকে দেখে গ্রামের সবাই উল্লাস আর চিৎকার করে বলেছিল"জয় বাংলা...বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!যুদ্ধ শেষ...আর যুদ্ধ হইব না!” চারিদিকে কেবলই আনন্দের জোয়ার বয়েছিল! একও একজন মুক্তিসেনাকে এক মুহূর্ত জড়িয়ে ধরার জন্য মানুষের সেকি উল্লাস...! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেয়। -"চাচা কই যাইবেন!" রিকসা চালকের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে মিনহাজ। সাঁ সাঁ করে রিকসা ছুটে চলে " মিয়া একটু আস্তে চালাও...উফ একেবারে মাঘের শীত!”হঠাৎ খেয়াল করে পায়ে মুজা পরে আসেনি! এই এক সমস্যা...আজকাল অনেক কিছুই সে ভুলে যায়! "এইটাও কী ডায়াবেটিকসের কারণে!?”ভাবনায় পড়ে যায় সে...! কিছুদূর যেতেই দেখে রশিদ সাহেব রিকসার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। "এই থামা থামা থামা!” -কি হে বন্ধু রিকসা লাগবে? বহুদিন পর বন্ধুকে দেখে সহাস্যে বলে মিনহাজ উদ্দিন।এই কিছুক্ষণ আগে যত অস্থিরতা আর শীতের কাঁপন ছিল সব যেন কোথায় উড়ে যায়। রিকসায় উঠতে উঠতে নকল দাঁত বের করে হেসে দেয় রশিদ সাহেব। -হে হে হে তুমি কী বন্ধু এই ঠাণ্ডার মধ্যে রিকসায় লিফট দিতে বের হয়ছো? না কী অন্য কিছু? মিনহাজ উদ্দিন মুখ চেপে হেসে দেয়। দাঁতহীন মাড়ি দেখাতে সে লজ্জা পাচ্ছে। রশিদ সাহেবকে দেখলে তার কিছুটা হিংসে হয়। ছেলে ছেলে বউ অনেক খেয়াল রাখে। সেই কবে থেকে আফজালকে বলছে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে একটা নকল দাঁত সেট করে দিতে! কিন্তু সময় করতে পারছে না। আজ তিন বছরেও সময় হল না! সময় হবে মরলে! নিজে যাবে তাও যেতে দেবে না।ওর কোন বন্ধুর পরিচিত ডাক্তার আছে গেলে ডিস্কাউন্ট পাওয়া যাবে! খেতা পুড়ি তোর ডিস্কাউন্টের! কিন্তু মুখ না খুলে কথা বলবে কীভাবে?তাই যতটা সম্ভব ঠোঁট চেপে কথা বলে। বাজারে যাচ্ছে এইটা বলতে গিয়েও কী ভেবে যেন বলল না। মুচকি হেসে বলল- -তুমি গাড়ী চড়া মানুষ রিকসা লিফট কী তোমার ভাল লাগবে? -হা হা হা যা বলেছ...গাড়ি যদি গ্যারেজে থাকে রিকসাই তখন ঘোড়ার কাজ দেয়। হা হা হা "বিখ্যাত ঘোষের দৈ মিষ্টি" দোকানের কাছে আসতেই রশিদ সাহেব রিকসা থামায়। মিনহাজকে বলে -আরে নেমে আসো এখানে আজকে ভাপা পিঠা বানাবে! -ভাপা পিঠা...! মিনহাজ উদ্দিন নেমে আসে রিকসা থেকে। ভাড়া মিটিয়ে দুই বন্ধু ঢুকে যায় হোটেলে। ভাপা পিঠা কত বছর হয়েছে সে খায় না। মলি এই পিঠাটা খুব মজা করে বানাতে পারতো! মলি বলত "মিনহাজ অনেক পছন্দ করে বলেই না সে এতো মজা করে বানানো শিখেছে!” পিঠার ঘ্রাণে পেটের মাঝে গড়গড় করে শব্দ হয়। দুই বন্ধু বসে অনেক কথা বলে আড্ডা দেয়। পেট ভরে ভাপা পিঠা আর দৈ মিষ্টি খায়। মিনহাজ ভুলে যায় তার ডায়াবেটিকস কতটা হাই! মিষ্টি খাওয়া মানে তার জন্য বিষ। রশিদ সাহেব হেসে হেসেই বলে- বন্ধু আজকে কিন্তু আমাকে তুমি খাওয়াচ্ছ! আরেকদিন আমি খাওয়াব মনে রেখ। খুশিতে মিনহাজ উদ্দিনও হেসে হেসে বলে- আরে বন্ধু ভেবো না...! যত খুশি খাও...পরে ঠিকই সুদ আসলে আদায় করে নেব! হা হা হা রশিদ সাহেব একটু খেয়াল করলে দেখতে পেত মাঝে মাঝেই অজানা এক ভাবনায় মিনহাজের চোখ ভিজে ভিজে যাচ্ছে। "বিখ্যাত ঘোষের দৈ মিষ্টি" দোকান থেকে আরও কিছু পিঠা আর দৈ নিয়ে বের হয়ে আসে। ঘড়িতে দেখে একটা বাজে! সময় যে কীভাবে চলে গেছে সে টেরই পায়নি! রশিদ সাহেব চলে গেছে কিন্তু ওর বাসায় যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। "একটা জরুরি কাজ আছে!” এই বলে বিদায় জানিয়েছে বন্ধুকে। লাঠিতে ভর দিয়ে দিয়ে পার্কের ভীতরে ঢোকে! মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কুয়াশা ঘেরা মেঘের ফাঁক গলে সূর্যটা ঝিমুনি নিয়ে উকি দিয়েছে। সবুজ ঘাসে জমে থাকা খানিকটা শিশির হাতে নিয়ে মুখে মাখে মিনহাজ। একটা কষ্ট বুকের বাম দিকে চিনচিন করে ব্যথা বাড়ায়। হাজারো চিন্তা মাথার মাঝে ভনভন করছে।"আফজাল আজকাল ছুটির দিনেও অফিস করছে? ছেলেটা কী করে তা ওকে কখনো বলে না। জিজ্ঞাসা করলেও বিরক্ত হয়। কিন্তু কেন? ” ভাবনা হতেই ভীষণ কষ্ট বাড়ে...! পাশেই দেখে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এই মধ্য দুপুরেও রিকসার পুরনো টায়ার আর কাগজ জ্বেলে আগুণ ধরিয়ে গোল হয়ে বসে আছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া হচ্ছে বেশী। চোখ জ্বালা করছে। তবুও কি ভেবে সেও গিয়ে ওদের পাশে মাটিতে বসে পড়ে। আগুণের ওম নেয়...! বাচ্চাগুলো খিল খিল করে হেসে যায়। কেউ কেউ বারবার ওর কাছে থাকা পিঠা দৈয়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেটে নেয়। মিনহাজ ব্যাগটা খুলে দুইটা পিঠা ওদেরকে দেয়। ওরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। "কী আশ্চর্য! সবাই ভাগা ভাগি করে পিঠাগুলো হাতে নেয়! ওদের মাঝে কত মিল মহব্বত!" কোথা থেকে যেন হিম ঠাণ্ডা একটা বাতাস এসে ওকে জড়িয়ে ধরে! অনেক শীত লাগে...! ভীষণ বাথরুমের বেগ আসে। অনেক কষ্টে রাস্তায় এসে একটা রিকসা নেয়। "সারাদিন ঘরের ভীতরেই তো থাকে! মাসে একটা দিন একটু বাজারে পাঠাই তাতেও কত ঢং করে! গিয়ে দেখ এই বুড়ো বয়সে কোথায় বসে আড্ডা মারছে!” দরোজার কাছে এসে দীনার উঁচু স্বরে চিৎকার শোনা যায়! মিনহাজ বাসায় ঢুকতেই দেখে দীনা কুসুমের সাথে কথা বলছে! ওকে দেখে থেমে যায়! বাইরে থেকে কথাগুলো সে শুনতে পেয়েছে! বুকের মাঝে তোলপাড় করে অচেনা ব্যথারা! কুলসুম ওকে দেখে এগিয়ে এসে হাত বাড়ায়। মিনহাজ ব্যাগে আনা পিঠা আর দৈ মিষ্টি উড় হাতে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে। দীনা চিৎকার করে বলে উঠে- -এইসব রাস্তার জিনিষ কেউ খায় নাকি...ফেলে দে! েই দে আমাকে আমি নিজেই ফেলে দিচ্ছি এইসব খাবে আর বাথরুম নষ্ট করবে! যতসব...!” জানালা দিয়ে কিছু ফেলে দেবার শব্দ কানে এলো। মিনহাজ ভীষণ ঘামছে তবুও শীত লাগছে। বাথরুম সেরে উঠে দাঁড়াতেই...চারিদিকে অন্ধকার করে ঠাণ্ডা একটা কাঁপন ঝাঁকুনি দিয়ে ওকে ফেলে দিতে চায়! সুগারটা যে ভয়াবহ আকারে বেড়েছে তা বুঝতে বাকি থাকে না! দরোজা খুলে বের হয় কিন্তু মনে হয় এসব কিছুই করছে বাতাসে ভেসে ভেসে! -"দাদা বাজার কই? কিছুই তো আনেন নাই! খালাম্মা রাগ করছে অনেক। শেষমেষ পিজা ডিলিভারি অর্ডার দিয়া আনছে! ও দাদা বাজার না হইলে দুপুরে রান্দুম কী? খাইবেন কী?” মিনহাজ উদ্দিন কিছুই বলে না। দীনা কীসব যেন বলছে তাও ঠিকমত শুনতে পায়না! রাগে গজগজ করছে মেয়েটা! ও সোজা ঘরে ঢুকে জানালা দিয়ে দেখে পাশের বস্তির কয়েকটা বাচ্চা কী অসীম তৃপ্তি নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ভাপা পিঠা দৈ মিষ্টি খেয়ে যাচ্ছে। ভীতর থেকে একটা কষ্ট উগরে বের হতে চায়! কিন্তু বের হতে না পেরে বুকে জ্বালা ধরায়। পায়ে পায়ে বাড়ি লাগে...সে কোনভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। -"উহহ আহ...উহহ" করতে করতে লেপ গায়ে জড়ায়। বুঝতে পারছে আজকের অভিমানটা অনেক বেশিই হয়ে গেছে। "মলি অনেক শীত করছে...জানালা দরজা সব বন্ধ করে দাও! উফ...মলি শুনতে পাওনা!” চোখ বুজে আসে! তবুও থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে জলে ভরা ঘোলা চোখ মেলে তাকায়,দেয়ালে ঝুলানো প্রিয়তমার ছবিটার দিকে। তাড়াহুড়ো করে মোড় ঘুরতে গিয়েই বিপত্তি। একেবারে অ্যাক্সিডেন্টই করে বসল পবিত্র। ওদিক থেকে যে একটা মোটরসাইকেল আসছে তা তো সে বুঝতেই পারেনি। কি করে বা আর পারবে? মোটরসাইকেলওয়ালা যদি হর্ন না দিয়েই হোন্ডাটা বাঁই করে ঘুরিয়ে দেয় তবে কি আর পবিত্রকে দোষ দেওয়া যায়? ‘দেখে চলতে পারো না?’ রাস্তায় পড়ে চেঁচিয়ে ওঠে সে। তার সাইকেলটা ছিটকে পড়েছে খানিকদূরে, চাকাদুটো আস্তে আস্তে ঘুরে চলেছে তখনও। আশ্চর্য ব্যাপার! ধাক্কা মেরে চলে গেল, অথচ একবার ফিরেও তাকাল না ছেলেটা। সতেরো আঠারোর মত বয়স হবে। পেছনে সিটে বসে তার গায়ে লেপ্টে রয়েছে লাল টপ আর শর্ট জিন্স পরা তারই বয়সী একটা মেয়ে। ছেলেটার এমন ভ্রূক্ষেপহীন মনোভাবে বেশ বিচলিত হয়ে পড়ল পবিত্র। হাজার হোক, সে তো তার বাবার বয়সী পঞ্চাশোর্দ্ধ এক ভদ্রলোক। তার প্রতি একটা সহমর্মিতা দেখানো তো ওদের কর্তব্য ছিল। যুগের কি মহিমা! পবিত্রর পা কেটে তখন গলগল রক্ত ঝরছে। হাতে, থুতনিতেও কেটে ছড়ে গেছে। কনুই আর হাঁটুতে চোট লেগেছে, বেশ যন্ত্রণা। অথচ কেউই এল না তাকে সাহায্য করতে। অবশ্য রাস্তাতে কেউ ছিলও না। এই ভরদুপুরে আশেপাশের গৃহস্থ বাড়িগুলোও সব ঘুমন্ত। ইশার শরীরটা আজ ভাল নেই। টুপুসও স্কুলে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি অফিস সেরে বাড়ি ফিরছিল পবিত্র যাতে সে স্ত্রীকে কিছু সাহায্য করতে পারে। কিন্তু অবস্থাটা এখন এমনই দাঁড়াল যে তার পক্ষে কাউকে সাহায্য করা তো দূরস্থ, তারই বরং এখন সাহায্যের প্রয়োজন। সে উঠে কোনোমতে দাঁড়াতে যাবে এমন সময় কানে এল একটা হৈ হৈ শব্দ। পবিত্র তাকিয়ে দেখে দুটো ছেলে দৌড়তে দৌড়তে এদিকেই আসছে। একজনের রোগা পাতলা চেহারা, অন্যজনের গাঁট্টাগোট্টা। রোগা ছেলেটার চোখদুটো খুব উজ্জ্বল, বেশ সজীব। চোদ্দো কি পনেরোর মত বয়স হবে। অন্যজনের বয়স একটু বেশী বলেই মনে হল। ‘কি হয়েছে কাকু? পড়ে গেছেন? চিন্তা নেই, চাপ নেবেন না। আস্তে আস্তে আমার এই হাতটা ধরে ভর দিয়ে উঠুন। পুকাই, তুই কাকুর ঐ হাতটা ঘর।‘ গাঁট্টাগোট্টা চেহারা যেন সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। তারপর ধরাধরি করে পবিত্রকে ওরা সামনের একটা বাড়ির উঁচু দাওয়ার ওপর বসায়। ‘পুকাই, তুই গিয়ে ক্লাব থেকে ফার্স্ট এড বক্সটা নিয়ে আয় তো। আর আমি দেখি এদিকে কোথাও জল পাওয়া যায় কিনা। ছেলেটা বাড়ির ভেতর ঢুকে হাঁক ছাড়তে লাগল, ‘কেউ আছেন বাড়িতে?’ বাড়িতে কেউই ছিল না। তিন-চারবার হাঁকডাকের পরেও কেউই যখন দরজা খুলল না, ছেলেটা অন্যত্র জলের খোঁজ করতে বাধ্য হল। অবশ্য সামনেই একটা কল পাওয়া গেল। টাইমকল। সিমেন্ট বাঁধানো কলপাড়। দেড়টা এখনও বাজেনি, তাই জল থাকারই কথা। কলটা একটু খুলতেই ফস্‌ করে জল ছিটকে এসে ছেলেটার পা দুটো ভিজিয়ে দিল। বারমুডাটাও ভিজল খানিক। ছেলেটা পকেট থেকে একটা রুমাল বার করে সেটাকে জলে ধুয়ে নিল। তারপর নারকোলের একটা মালাইচাকি জোগাড় করে তাতে কিছুটা জল ভরে নিল। পবিত্র তখন মাথাটা দাওয়ার থামে এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ বিশ্রাম নিচ্ছে। সত্যি বলতে কি, পবিত্র যেন তখন ওদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছিল। তার মনে হতে লাগল, এরা যেন মানুষ নয়। স্বয়ং ভগবান এদের দেবদূত করে পাঠিয়েছেন, তারই সেবার জন্য। তাই তো এদের সাথে রক্তের কোন সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও এদের এত আপন মনে হয়। যেন নিজের ছেলে তাকে জল দিয়ে তার কাটা জায়গাগুলো ধুয়ে দিচ্ছে। ব্যথায় টনটন করা কনুইয়ে শীতল জলের মলম দিচ্ছে। পবিত্র তাকে মোলায়েম স্বরে বলে, ‘তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব বাবা। তোমরা না এসে পড়লে আমি এখনও এখানেই পড়ে থাকতাম। বয়স হয়েছে, এখন তো তোমরাই আমাদের দেখবে। তা তোমার নাম কি বাবা?’ ছেলেটা রুমাল ধুয়ে নিংড়ে নেয়, তারপর রক্ত মুছতে মুছতে বলে, ‘অর্জুন’। - ‘বাঃ ভাল। কোথায় থাকো তুমি? কিসে পড়?’ - ‘এই তো এখানেই। এখানে আমায় মোটামুটি সবাই চেনে। শুধু অর্জু বললেই হবে’। - বাঃ তোমার তো তাহলে বেশ নামডাক আছে। অ্যাঁ! বেশ করিৎকর্মা তো তুমি, গুড। এই তো চাই। অর্জু নিঃশব্দে কাজ করে যায়। একটা কথাও বলে না। পবিত্রই আবার বলে ওঠে, ‘কিন্তু তুমি কিসে পড় তা তো বললে না?’ - সামনের বছর মাধ্যমিক।‘ মাধ্যমিক শুনে একটু অবাক হয় পবিত্র। কারণ মাধ্যমিকের তুলনায় এ ছেলেকে একটু বড় বলেই মনে হচ্ছে। যাক গে, তবে ওর কথাবার্তা বলার মধ্যে বেশ একটা চটপটে ভাব আছে, একটা দৃঢ়তাও। খানিকক্ষণ বাদে পুকাইকে আসতে দেখা গেল। হাতে একটা বাক্স। যার সামনেটায় লেখা, ফার্স্ট এইড্‌। পুকাই আসতেই ওর হাত থেকে বাক্সটা প্রায় ছিনিয়ে নেয় অর্জু। ‘কি করিস কি? এত দেরি কেন?’ খিঁচিয়ে ওঠে অর্জু। তার গলার দেমাকি স্বরে বেশ থতমত খেয়ে গেছিল পুকাই, সে কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই অর্জু তাকে অর্ডারি গলায় বলে, ‘যা, মোড় থেকে একটা রিক্সা ডেকে আন।‘ পুকাই যেন ওর এই আদেশেরই অপেক্ষা করছিল। আজ্ঞা পেতেই সে হনহন করে হাঁটা লাগাল মোড়ের দিকে। পবিত্র বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, ‘আবার রিক্সা কেন? আমিই হেঁটে চলে যেতে পারব। এখন ব্যথা অনেক কমে গেছে।‘ তাকে বাধা দিয়ে অর্জু গমগম করে ওঠে, ‘থামুন দেখি কাকু। অর্জু যখন আছে, তখন সে-ই আপনার সব দায়িত্ব নেবে। আপনি আমাদের পাড়ায় এসে যখন চোট পেয়েছেন, আর আমি বসে থাকব?’ - ‘হাঃ, হাঃ, হাঃ। সত্যি তুমি একটা পাগল। ঠিক আছে বাবা, ঠিক আছে। তবে আমাদের বাড়িতে একবার এস কিন্তু। কাছেই আমার বাড়ি। তোমাকে দেখলে আমার ঘরের লোক যে কত খুশি হবে।‘ বলতে বলতে একটু থামে পবিত্র। তারপর সে আবার শুরু করে, ‘তোমাদের মত ছেলেরা আছে বলেই তো পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে বাবা।‘ এসব কথার কোন উত্তর দেয় না অর্জু। সে নিজের মনে কাজ করে যেতে থাকে। বাক্সটা খুলে লাল মলম বের করে সে পায়ের কাটা ঘায়ে লাগিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে রিক্সার আওয়াজ শোনা যায়। ‘চলুন কাকু, রিক্সা এসে গেছে’। দাঁত বের করে কোমল গলায় বলে অর্জু। পবিত্রর হাজার মানা সত্ত্বেও অর্জু আর পুকাই তাকে ধরাধরি করে রিক্সায় তোলে। আর তারা রিক্সার পেছন পেছন সাইকেলে যাবে ঠিক করে। সাইকেলটার হ্যাণ্ডেলটা ঘুরে গেছিল। দু এক জায়গায় ঘটাং ঘটাং আওয়াজ। ওরাই সেসব ঠিক করে দিল। তারপরে সাইকেলে উঠে বসল পুকাই। আর তার পেছনে ক্যারিয়ারের দুই দিকে দু-পা ফাঁকা করে বসে অর্জু। খানিকদূর যেতেই অর্জু চেঁচিয়ে ওঠে, ‘দেখুন কাকু, আমাদের নতুন ক্লাব। আপনার ডানদিকে।‘ পবিত্র পাশ ফিরতেই দেখে, ‘কৈশোর সমিতি’, স্থাপিত ২০১৩। রেজিস্ট্রি নম্বরটা অবশ্য কোথাও খুঁজে পেল না সে। মিনিট দশেক চলার পরে পবিত্রর বাড়ি আসে। হলুদ রঙের দোতলা বাড়িটার সামনে কিছুটা বাগান। রিক্সা থেকে নামার সময় অর্জু আর এগিয়ে এল না। ‘কত ভাই?’ ‘তিরিশ’। সটান জবাব দেয় রিক্সাওয়ালা। ‘অ্যাঁ! এইটুকু আসতেই তিরিশ কি গো?’ পবিত্র অর্জুদের মুখের দিকে একবার তাকায়। ওরা বাড়ির উঠোনে তখন সাইকেলটা রেখে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে একটা কথাও তারা বলে না। অগত্যা পবিত্র পকেট থেকে তিরিশটা টাকা বের করে রিক্সাওয়ালার হাতে দেয়। ভাড়া মিটিয়ে পবিত্র সাইকেলটাকে ঘরে ঢোকাতে যাবে এমন সময় অর্জু বলে ওঠে, ‘তাহলে আমাদেরও ছেড়ে দিন কাকু।‘ - অ্যাঁ। না না। ছাড়ব কি? তোমরা এস। ঘরে এসে একটু বস। তোমাদের আজকে না খাইয়ে ছাড়ছি না। সত্যি তোমরা না থাকলে ...।‘ - ‘ আরে না না। আমরা সেকথা বলছি না। বলছি, আমাদের ভাড়াটাও এবার মিটিয়ে দিন। জানেনই তো রেট। একশো। দুজনের টোটাল দুশো। টাকাটা ছাড়ুন। কাটি।‘ কর্কশভাবে বলে ওঠে অর্জু। পবিত্র খানিকটা সময় জন্য হাঁ হয়ে থাকে। তারপর অবাকপারা গলায় বলে, ‘ কি বলছ কি তুমি? তবে এই জন্যেই কি তোমরা এত সব কাজ করে দিলে?’ অর্জুও ততধিক বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, ‘তা নয় তো কি? এমনি এমনি এত খাটতে যাব কেন? তাও তো বেশি কিছুই চাইলাম না। মাত্র দুশোটা টাকা, তাইতেই এই?’ তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হেসে ওঠে অর্জু। পবিত্র আর কথা না বাড়িয়ে পকেট থেকে একশো টাকার দুটো নোট বের করে অর্জুর হাতে দেয়। অর্জু একবার ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে চলে যায়। যাবার আগে শুধু বলে যায়, ‘নিজের খেয়াল রাখবেন, আর কিছু হয়ে গেলে আমরা তো আছিই। চলি’। পবিত্র টের পায়, তার হাত পা কাঁপছে। সে এই প্রতিদান কল্পনাও করতে পারে নি। আজকের কৈশোর কি এতটাই বিষয়ী? সে যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। কিছুক্ষণ পর সে দরজা ঠকঠক করে। ইশা এসে দরজা খুলতেই চেঁচিয়ে ওঠে, ‘ও মা! কি হয়েছে তোমার? পড়ে গেছিলে বুঝি? ও মা গো!” - চুপ কর, চুপ কর। ভাল্লাগছে না এই চেঁচামেচি’। বিরক্তিতে স্ত্রীকে ধমকে ওঠে সে। - কেন? কি হয়েছে? পবিত্র ঘরে ঢুকে খাটে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেয়। শরীরের থেকেও তার মন অনেক বেশি ক্লান্ত আর অবসন্ন। বুকে একটা কষ্ট অনুভব করে সে। তারপর ইশাকে সে সমস্ত কথা খুলে বলে। ইশা সবটা শোনে। তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, ‘তো?’ পবিত্র একটু অবাক হয়। ইশা আবার বলে, ‘তুমি সুস্থভাবে বাড়ি এসেছ এটাই কি বড় নয়?’ পবিত্র আরো আশ্চর্য হয়ে বলে, ‘কিন্তু তাই বলে ওরা টাকা নেবে? এটা কি ধরনের ব্যবসা?’ ইশা পবিত্রর গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে, ‘কি ছেলেমানুষ গো তুমি? একেবারে সেকেলেই রয়ে গেলে। বলি আজকের যুগে টাকা ছাড়া চলে? বরং আমি তো ভালই বলব। তুমি সুস্থ হয়ে নিরাপদে বাড়ি এসেছ এটাই তো ভাল। না হলে হাত পা ভেঙে কোথায় পড়ে থাকতে। সেই তুলনায় ওদের সার্ভিসটা ভালই বলতে হবে। পবিত্র আর কোন উত্তর করে না। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে। তারপর চোখদুটো বন্ধ করে দেয়। ইশা অবাক হয়ে লক্ষ করে পবিত্রর চোখের কোণে একবিন্দু জল চিকচিক করছে ঠিক মুক্তোর মত। ফেসবুক লাইভেই মেয়েরা কেমন হট হয় দেখুন আমাদের সমাজের মেয়েরা কি এমনি লাইভ ভিডিও করে ভারতি মেয়েরা এমনি ভাবে ফেসবুকেই লাইভ হট হয় কেনো দেশী মেয়েরা ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে এমন হট হয় দেশী মেয়েরা ভালোবাসার টানে এমনি লাইভ হট ভিডিও দেয় দেশী মডেলরা কিভাবে পারে এমন হট লাইভ ভিডিও দিলে দিয়েই দিলো তামান্না তার হট লাইভ ভিডিওটা এমন খারাফ ভাবে এই লাইভ হট ভিডিও দিলো মেয়েটা ভালো মেয়েরা এমন হট ভিডিও দেয় না ফেসবুক লাইভেই লাইভ চলাকালে এ কেমন আচরণ করিলো দেশি যুবতি ভালোবাসার টানে এমনি হট লাইভ ভিডিও দিলো ফেসবুকে প্রেম করে লাইভে এসে ভিডিও ছাড়া কি অপরাধ নয় বন্ধুরা
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free